(বাঁ দিকে) জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এ বার মন্ত্রীর গ্রেফতারির নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক ছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)। আর তাই শুক্রবার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করার পরেই সকাল সকাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই বিষয়ে অবগত করালেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে অভিযান শুরু করে ইডি। অনেক রাতে গ্রেফতার করা হয় বনমন্ত্রীকে। তার পর আর কালবিলম্ব না করে স্পিকারকে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রথম গ্রেফতারির খবর কোথায় জানানো হবে তা নিয়েই ধন্দে ছিল ইডি। কারণ পুজোর ছুটির কারণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা বন্ধ রয়েছে। আগামী সোমবার থেকে সব সরকারি অফিসের মতোই বিধানসভার দফতরও খোলা হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারির খবর স্পিকারের দফতরে ইমেল বা ফ্যাক্স করে জানানোর সুযোগ ছিল না ইডির কাছে। যদি স্পিকারের দফতরকেই বিষয়টি জানাতে হয় তাহলে অপেক্ষা করতে হবে সোমবার পর্যন্ত। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি নিয়ে আর স্পিকারের অভিযোগের সম্মুখীন হতে চায়নি ইডি, এমনটাই সূত্রের খবর। তাই সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সরাসরি গ্রেফতারির খবর জানানো হবে বিমানকে। সেই মতো শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির খবর জানানো হয় তাঁকে। স্পিকার নিজেও সে কথাই জানিয়েছেন।
নিয়মানুযায়ী, বিধানসভার কোনও সদস্যকে গ্রেফতার করার পরেই যত দ্রুত সম্ভব তা বিধানসভার স্পিকারকে জানাতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্পিকার বিমান অভিযোগ করতেন, বিধানসভার সদস্যদের গ্রেফতারির খবর তাঁকে যথা সময়ে জানায় না সিবিআই কিংবা ইডি। বরং তাঁকে বিধায়কদের গ্রেফতারির খবর জানতে হয় সংবাদমাধ্যম থেকে। এর সূত্রপাত ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সে বার তাঁকে যথা সময়ে গ্রেফতারির খবর না জানানোর অভিযোগ করেছিলেন স্পিকার।
২০২১ সালের ১৭ মে নারদা কাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করে কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কামারহাটির বিধায়ক মদন এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। এ ক্ষেত্রেও তাঁকে গ্রেফতারির খবর জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন বিমান। এর পর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত বছর ২২ জুলাই ইডি গ্রেফতার করে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সময়ও তাঁকে গ্রেফতারির খবর ঠিক সময়ে জানানো হয়নি বলেই অভিযোগ করেছিলেন স্পিকার। এর পর ওই বছরই অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।
এ বছর ১৭ এপ্রিল বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতে গ্রেফতার করে সিবিআই। দুটি ক্ষেত্রেই স্পিকারকে গ্রেফতারির খবর যথা সময়ে না জানানোর অভিযোগ উঠেছিল। ধারাবাহিক ভাবে এমন ঘটনা ঘটায় গত বছর বিধানসভাতেই ইডি এবং সিবিআইয়ের আধিকারিকদের হাজিরা দিতে বলেছিলেন বিমান। কিন্তু দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনও প্রতিনিধি তাঁর সামনে হাজিরা না দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের দায় সেরেছিল। এ বছর অগস্ট মাসে স্পিকারের দফতরে এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিক। আর তার কয়েক মাসের ব্যবধানে রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেন জ্যোতিপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে স্পিকার কোনও অভিযোগ তোলার আগেই মন্ত্রীর গ্রেফতারির বিষয়ে তাঁকে অবগত করাল ইডি।