Recruitment Scam

দুর্নীতিতে শান্তনু দাদা, কুন্তল ভাই: কোর্টে দাবি ইডির

নিজেকে আড়ালে রাখার জন্য শান্তনু যে কখনওই কুন্তলের নাম নিতেন না, তাঁর উল্লেখ করতেন ‘ভাই’ বলে, তদন্তকারীরা সেটা আগেই জানতে পেরেছিলেন। আদালতে সেই দাদা-ভাই সম্পর্কটাই তুলে ধরা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৫:০৮
Share:

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের সদ্য বহিষ্কৃত দুই যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত দু’জনেই। তবে চোরে চোরে তুতো ভাইয়ের প্রবাদ বাক্যের থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁদের মধ্যে বড়দা-ছোট ভাই সম্পর্কের অভিযোগ এনেছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। খাস আদালতে দাঁড়িয়ে শুক্রবার ইডি-র তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, তৃণমূলের সদ্য বহিষ্কৃত দুই যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষের মধ্যে এক জন ‘চিটিংবাজি’-তে ছিলেন বড় ভাই, অন্য জন ছোট।

Advertisement

কে ‘বড়দা’ আর কে-ই বা ‘ভাই’? সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ দিন আদালতে পেশ করা রিপোর্টে ইডি জানিয়েছে, শান্তনুই ‘বড়দা’ এবং কুন্তল ‘ছোট ভাই’। নিজেকে আড়ালে রাখার জন্য শান্তনু যে কখনওই কুন্তলের নাম নিতেন না, তাঁর উল্লেখ করতেন ‘ভাই’ বলে, তদন্তকারীরা সেটা আগেই জানতে পেরেছিলেন। আদালতে এ দিন তাঁদের বয়ানে সেই দাদা-ভাই সম্পর্কটাই তুলে ধরা হয়েছে।

কুন্তলকে এ দিন জেল থেকে বিচার ভবনে সিবিআই (পিএমএলএ) বিশেষ আদালতে তোলা হয়। বিচারক বিদ্যুৎকুমার রায় তাঁর আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, কুন্তলের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ছ’‌কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। দু’-পাঁচ হাজার টাকা নয়। আয়কর দিলেই কালো টাকা সাদা হয় না। ‘‘আপনার দশটা বাড়ি, দশটা গাড়ি রয়েছে। আপনি তা কম দেখিয়ে আয়কর দিলেন। তাতে কালো টাকা সাদা হয়ে যাবে না। কুন্তলের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে। আবার তা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। আপনার মক্কেল ওই টাকার কথা জানতেন। টাকার অঙ্ক তদন্তে জানা গিয়েছে। ওই টাকার উৎস আপনাদের জানাতে হবে। আপনি ওই অ্যাকাউন্টে সব লেনদেনের নথি পেশ করুন,’’ কুন্তলের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কুন্তলের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহে চার্জশিট পেশ করা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর। ওই অভিযুক্তকে আরও ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার জন্য এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

ইডি আদালতে জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনুর ২৫টি এবং কুন্তলের ১০টি, সব মিলিয়ে ৩৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ় করা হয়েছে। প্রায় এক কোটি ১৬ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে শান্তনু এবং তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। ইডি-র আরও দাবি, সম্প্রতি কুন্তলের আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টে আরও ১৬ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে।

কুন্তলের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘ওই অভিযুক্ত টালিগঞ্জে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিনিয়োগ করেছিলেন। গাড়ি দিয়েছিলেন বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। সম্প্রতি অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত ও পার্লার ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তীকে তলব করা হয়েছিল। তাঁরা স্বেচ্ছায় টাকা ফেরত দিয়েছেন।’’

কুন্তলের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেল ৫৬ দিন হেফাজতে আছেন। তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে তিনি ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেও তদন্তকারীরা বলতে পারছেন না, সেই টাকা কোথায় গেল। আমার মক্কেলের অ্যাকাউন্টের সব টাকার লেনদেনের নথি আছে।’’

শান্তনু ইতিমধ্যে দাবি করেছেন, কুন্তলই নিয়োগ দুর্নীতির মূল চক্রী। কুন্তল টাকা পাঠিয়েছেন ভিন্‌ রাজ্যে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আদালতের বাইরে কুন্তল বলেন, “অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’’ দল থেকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে কুন্তল বলেন, “সঠিক সিদ্ধান্ত। দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব। গোয়ার হোটেল, ত্রিপুরার চা-বাগানে আমার বিনিয়োগের কথাগুলো বলছেন। দয়া করে ওই ঠিকানাগুলো আমাকে দিন।’’

ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তল হেফাজতে থাকাকালীনই ত্রিপুরায় আর্থিক লেনদেনের হদিস পাওয়া গিয়েছিল। ইডি-র হেফাজতে থাকা শান্তনুকে জেরা করে কুন্তলের আর্থিক লেনদেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে বলে জেরায় জানিয়েছেন শান্তনু। ওই সব প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগ ছিল। শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে আগামী সপ্তাহে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement