(বাঁ দিকে) আনিসুর রহমান, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (মাঝে), আলিফ নুর(ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (বালু) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ধৃত আনিসুর রহমান এবং আলিফ নুর ওরফে মুকুল রহমান। এমনই দাবি করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। জেরায় এই ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে রহমান ভাইদের প্রশ্ন করেন ইডি আধিকারিকেরা। ইডি সূত্রে খবর, জেরায় তাঁরা দাবি করেছেন, রেশন ফাঁকি দিতেই মন্ত্রীকে টাকা দিয়েছিলেন।
আনিসুর এবং আলিফকে গ্রেফতারের পর আদালতে ইডি আগেই দাবি করেছিল, আনিসুর এবং আলিফ টাকা দিতেন জ্যোতিপ্রিয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাকে। প্রশ্ন উঠেছিল কেন প্রাক্তন মন্ত্রীকে টাকা দিতেন তাঁরা? রহমান ভাইদের সংস্থার ব্যাঙ্ক নথি খতিয়ে দেখে ইডি জানতে পেরেছে ২০১৮-২০১৯ সালে জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় ২০ লক্ষ টাকা যায় আনিসুর এবং আলিফের কাছ থেকে। জেরায় তাঁদের সেই টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। তাঁরা দাবি করেছেন, কোনও রকম সামগ্রী সরবরাহ না করেই তাঁদের ব্যবসা মসৃণ ভাবে চালাতে জ্যোতিপ্রিয়ের সংস্থাকে টাকা দিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে, রেশন দ্রব্য সরবরাহ না করার কথাই বলছেন আনিসুরেরা। অর্থাৎ, ‘উৎকোচ’ হিসাবে ওই টাকা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলেই মনে করছে ইডি।
ইডি সূত্রে আরও খবর, ৩০ জুলাই আলিফের সংস্থা ‘জিপি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড’-এ তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি ফাঁকা চালান উদ্ধার করেছিলেন আধিকারিকেরা। সেই সব চালান আটা সরবরাহের জন্য বলে খবর ইডি সূত্রে। তাতে কোথায়, কত পরিমাণ আটা পাঠানো হয়েছে তার উল্লেখ নেই। তবে ওই সব চালানে সরকার অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটারের স্ট্যাম্প এবং সই রয়েছে। অনুমান, চালান থাকলেও আটা সরবরাহ করা হয়নি। ইডির নজরে রয়েছে এই সব বিষয়েও।
প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে আনিসুর এবং আলিফকে। আগেই একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বাকিবুর। জ্যোতিপ্রিয় নিজেও রেশন মামলাতেই জেল খাটছেন। শুক্রবার আনিসুর এবং আলিফকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আদালতে ইডি দাবি করে, গত ডিসেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর যে ‘চিঠি’ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তাতে ১০ লক্ষ টাকা করে সুদ দেওয়ার কথা জানা গিয়েছে। ইডির দাবি, ওই চিঠিতে মেয়েকে বালু নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুদ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা নিতে এবং মূল টাকায় হাত না দিতে। সেখান থেকে ইডির অনুমান, অলিফের কাছে অনুমানিক ২০ কোটি টাকা গচ্ছিত ছিল। এই বিতর্কের মধ্যেই উঠে এল কোনও পণ্য সরবরাহ না করে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া এবং ফাঁকা চালানের বিষয়টি।