—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ভোটের ঘোষণা হয়ে গেল! দেশ জুড়ে ১৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার চার বিধানসভা কেন্দ্র রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও মানিকতলায় ভোট হবে আগামী ১০ জুলাই। ফল ঘোষণা হবে ১৪ জুলাই। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২১ জুন।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সূত্রের খবর, চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রাথমিক ভাবে ৫৫ কোম্পানি বাহিনী নিযুক্ত করতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওই বাহিনী ১৫ জুন থেকে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলির বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে। তবে উপনির্বাচনে মোট কত বাহিনী ব্যবহার করা হবে, সেই সংখ্যা কমিশন এখনও চূড়ান্ত করেনি বলেই খবর।
বিজেপির প্রতীকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী, মুকুটমণি অধিকারী ও বিশ্বজিৎ দাস। পরে তাঁরা যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এ বার লোকসভা ভোটে তিন জনকেই তৃণমূল প্রার্থী করায় নিয়ম মেনে পুরনো দলের বিধায়ক-পদ ছাড়তে হয়েছিল তাঁদের। আর মানিকতলা কেন্দ্র শূন্য রয়েছে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পর থেকে। ওই কেন্দ্র নিয়ে মামলা চলা সেখানে উপনির্বাচন স্থগিত ছিল। আইনি জটিলতা কাটার পরে এ বার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়েছে।
বাংলা থেকে এ বার ৬ জন বিধায়ক লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তাঁদের বিধায়ক-পদে ইস্তফা দিতে হবে। তৃণমূলের নৈহাটি, মেদিনীপুর ও সিতাইয়ের বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, জুন মাল্য এবং জগদীশ বসুনিয়া সোমবারই বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দু’দিন আগে ইস্তফা দিয়েছেন তালড্যাংরার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা ও হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামকেও একই পথে হাঁটতে হবে। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, রাজ্যে ১০ কেন্দ্রের উপনির্বাচন একসঙ্গে করা হবে না কেন? তাদের বক্তব্য, সদ্য ৭ দফায় ক্লান্তিকর লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। দফায় দফায় ভোট হতে থাকলে আদর্শ আচরণবিধির কারণে প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। খরচের প্রশ্নও মাথায় রাখা উচিত বলে কমিশনকে মনে করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। কমিশন সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্যই বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্রের (ইভিএম-ভিভিপ্যাট) প্রথম পর্যায়ের যাচাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। লোকসভায় জয়ী ৬ জন বিধায়ক-পদ ছাড়লে ৬ মাসের মধ্যে সেখানে উপনির্বাচন করতে হবে। সেইমতোই পরে ওই ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে।
যে চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন, তার মধ্যে রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদায় লোকসভা ফলের নিরিখে এগিয়ে বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটে তারাই তিন কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল। সেই দিক থেকে বিজেপির কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে উপনির্বাচনে অনেক সময়েই ফল হয় শাসক দলের অনুকূলে। রাজ্যে সামগ্রিক ভাবে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরেই উপনির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিজেপি শিবিরকে। মানিকতলা কেন্দ্রে অবশ্য লোকসভার ফলেও তৃণমূল এগিয়ে তবে গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় তাদের ‘লিড’ কমেছে। এই কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালে সাধন জিতেছিলেন ২০ হাজারের বেশি ভোটে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজারের কিছু বেশি ভোটে। ভেঙে ভেঙে উপনির্বাচন করা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ভোট ঘোষণার দিনই মানিকতলা নিয়ে দলীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। উত্তর কলকাতার দলীয় নেতা অতীন ঘোষ, কুণাল ঘোষ, বিধায়ক পরেশ পাল এবং স্বপন সমাদ্দারকে এ দিন নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রের জন্য এই চার জনের একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তাঁদের। দলীয় সূত্রে খবর, আজ, মঙ্গলবার মানিকতলা অঞ্চলের দলীয় পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা মমতার।
লোকসভায় আশানুরূপ ফল না পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙতে চাইছে না সিপিএম। উপনির্বাচনে রায়গঞ্জ আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে বাগদা ও মানিকতলায় তারা লড়তে চায় বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র কংগ্রেস নিতে চায় কি না, দেখা হবে। গোটা বিষয়টি নিয়েই কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। অন্য দিকে, লোকসভার ভোট ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কলকাতায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠক ডাকা হয়েছে ২১ জুন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। রাজ্যের নেতারা দিল্লিতে এসে যা বলেছিলেন, পর্যবেক্ষকেরা রাজ্যে গিয়ে যে মত নিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিজের হার নিয়ে এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনও আফশোস নেই। এর পরে কী অবস্থান হবে, আলোচনা করেই ঠিক হবে।’’ কংগ্রেস অবশ্য যে দিন বৈঠক ডেকেছে, সে দিন চার কেন্দ্রে মনোনয়নের সময় শেষ হবে।