ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-কে প্রকাশ্যেই কড়া ভর্ৎসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশ দিলেন, ‘রাজনৈতিক চাপে’ কাজ করতে কোনও অসুবিধা হলে যেন ওই আইপিএস সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেন। পাশাপাশিই, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সুপারকে বলেন, ‘‘পূর্ণেন্দু তো কাজ করছে। ওকে দেখে শেখো!’’
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর হল বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অত্যন্ত স্বল্প ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট যে, তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি-কে চাপ দিচ্ছেন তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্য। ওই অফিসারেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাজ করেন। তৃণমূলের নয়। তৃণমূল তাঁদের বেতনও দেয় না। উনি (মমতা) অফিসারদের রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রাখতে চান। কিন্তু উনি কিছুই করতে পারবেন না। বড়জোর কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দিতে পারেন! দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের ব্যবহারের জন্য যাঁদের বাড়ি এই রাজ্যে নয়, তেমন কোনও কোনও অফিসার পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে আসতে চাইছেন না।’’
সম্প্রতি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তোলাবাজির অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। তার আগেই মমতার তীব্র ভর্ৎসনার মুখে প়ড়েন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই জেলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে নীরব। তিনি সরাসরি অমরনাথকে বলেন, ‘‘তোমার জেলা সম্পর্কে আমি অভিযোগ পাচ্ছি। কাউকে সাজিয়ে পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকদিন তোমাদের বলেছি। কিন্তু তোমরা কিছু করোনি। তার পর আমি হস্তক্ষেপ করেছি।’’
অমরনাথ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে অ্যাকশন নিয়েছি ম্যাডাম। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সুপারকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘যারা দাঙ্গা করে তারা হিন্দু বা মুসলিম— কোনও ধর্মেরই নয়। কোনও কোনও পলিটিক্যাল লিডার পিছন থেকে ইন্ধন দেয়, তাই দাঙ্গা হয়। সুতরাং এটা তোমাকে কড়া ভাবে দেখতে হবে।’’
তার পরেই অমরনাথকে সটান মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘তোমার কি ওখানে কাজ করতে ভয় করছে? তোমাকে কি গভর্নর ফোন-টোন করেন? এটা করবে না, ওটা করবে না, সেটা করবে না…। অবশ্য সেটা উনি বললেও তুমি এখন তো আর বলবে না। তবে তোমার ও সব দেখার দরকার নেই। মনে রেখো, তুমি রাজ্য সরকারের কাজ করছ।’’
মুখ্যমন্ত্রী ওই এসপি-কে আরও বলেন, ‘‘ভাল ভাবে কাজ করবে বলেই তোমাকে ওখানে দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগ পাচ্ছি। হলদিয়াতেও পেলাম এবং আমাকে বাধ্য হয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করাতে হল। ওরা ধানুকা ও এক্সাইডের কাজ করতে অসুবিধা করছিল। তোমরা থাকতে আমাকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হবে?’’ শেষে মমতা বলেন, ‘‘তুমি যদি মনে কর, তোমার ওখানে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছো, আমাকে সরাসরি বলতে পারো।’’ অমরনাথ তাঁর আসনে বসে পড়েন।