জেলায় জেলায় কার্নিভাল।
দুর্গাপুজো ইউনেসকোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর এ বছর কলকাতার আদলে জেলায় জেলায় পুজো কার্নিভাল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলপাইগুড়ি বাদে সেই মতো রাজ্যের সব জেলায় পালিত হল কার্নিভাল।
সদর ও গ্রামীণ হাওড়ায় আলাদা করে কার্নিভাল হল। নির্ধারিত সময়সূচি মেনে বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠান। হাওড়া শহর এলাকার ১৬টি ও গ্রামীণ এলাকার ১৮টি পুজো বিসর্জনের কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। এই কার্নিভালে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মহিলাদের ঢাকের তাল আর তাঁদের ছৌ নাচ। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতেও কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। মোট ২১টি পুজো অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানে বারাসত চাঁপাডালি মোড়ে মূল মঞ্চ তৈরি ছিল। বিকেল ৪টে নাগাদ নৃত্যানুষ্ঠান, ছৌ নাচ ও মহিলা ঢাকিদের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার কুলপিতে অনুষ্ঠিত হল পুজো কার্নিভাল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ২৪টি বড় পুজোকে কার্নিভালে অংশ নিতে দেওয়া হয়। কুলপির গোপালনগর থেকে প্রতিমা-সহ সুসজ্জিত ট্যাবলো নিয়ে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বিডিও অফিস পর্যন্ত যায় শোভাযাত্রা।
হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় আয়োজিত হয়েছে পুজো কার্নিভাল। মোট ২২টি পুজো কমিটি অংশ নিয়েছে অনুষ্ঠানে। হুগলির কারবালা মোড় থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। গন্তব্য ছিল চুঁচুড়ার অন্নপূর্ণা ঘাট। পূর্ব বর্ধমানে কার্নিভালের উদ্ধোধন করেন বলিউডের চলচিত্র অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে। ফিতে কেটে তিনি কার্নিভালের শোভাযাত্রার সূচনা করেন। বর্ধমান শহর ও বড়শুল মিলিয়ে মোট ৩০টি পুজো কমিটি কার্নিভালে অংশ নেয়। প্রথম বার কার্নিভালের আয়োজন ঘিরে প্রবল উত্তেজনা দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে। ব্যাপক ভিড়ের জেরে সাময়িক বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়। কার্নিভালে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং শ্রম ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। ছিলেন আসানসোল লোকসভার সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই শহর মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে কার্নিভাল হল। মোট ১৭টি পুজো কমিটি কার্নিভালে অংশ নেয়। বটতলা চক থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে তা যায় গান্ধী ঘাটের দিকে।
বহরমপুর ওয়াই.এম.এ ময়দানে আয়োজিত হল মুর্শিদাবাদের কার্নিভাল। ১৫টি পুজো কমিটি অংশ নেয় অনুষ্ঠানে। কার্নিভালে হাজির ছিলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার, সাংসদ খলিলুর রহমান, জেলা সভাধিপতি শামসুজ্জোহা বিশ্বাস-সহ কয়েক জন বিধায়ক। বাঁকুড়ার শোভাযাত্রা শুরু হয় জুনবেদিয়া মোড় থেকে সতীঘাট। বেলুন উড়িয়ে কার্নিভ্যালের সূচনা করেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুজো কার্নিভাল আয়োজিত হল কোচবিহারে। শহরের বিশ্বসিংহ রোডে মিনা কুমারী চৌপতি থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শেষ হয় হরিসপাল মোড়ে। উত্তর দিনাজপুরে রায়গঞ্জ শহরের শিলিগুড়ি মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হয় বিদ্রোহী মোড়ে। দক্ষিণ দিনাজপুরে শোভাযাত্রা শুরু হয় বালুরঘাট গেট থেকে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ২০টি পুজো।
তবে শিলিগুড়িতে কার্নিভালকে কেন্দ্র করে খানিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। শিলিগুড়ি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোড মহানন্দা সেতু সংলগ্ন এয়ারভিউ মোড় থেকে সেবক রোড হয়ে সফদর হাসমি চক। সকাল থেকে রাত সব সময় ব্যস্ত থাকে এই রুট। শুক্রবার দুপুর থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্রের ওই সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেডিক্যাল কলেজ থেকে এনজেপি স্টেশন যাওয়ার অন্যান্য বিকল্প রাস্তা থাকলেও প্রধান সড়ক বন্ধ থাকায় ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে সাধারণ মানুষকে। অভিযোগ পুলিশও তৎপর ছিল না। জলপাইগুড়িতে অবশ্য কার্নিভালের আয়োজন করা হয়নি। দশমীর রাতে মালবাজারে প্রতিমা বিসর্জনে বিপর্যয়ের জেরে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়েছে।