ফাইল চিত্র।
ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে মাটিতে নেমে আসছে বিমান। ককপিটে বসে এক পাইলট যখন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত, তখন অন্য পাইলটের চোখ ঘুরছে ককপিটের বাইরে।
এটাই নিয়ম, বলছেন অভিজ্ঞ পাইলটেরা। কারণ, বিমান তখন মাটি থেকে প্রায় হাজার দুয়েক ফুট উপরে। ফলে, আশপাশে অন্য বিমান আছে কি না, কোনও পাখি চোখে পড়ছে কি না, রানওয়ে কত দূরে, সেখানে কোনও বাধা আছে কি না, তাই দেখতে ব্যস্ত থাকতে হয় অন্য পাইলটকে। সেই সময়ে যদি নীচ থেকে কোনও আলো ছিটকে আসে, তা হলে সাময়িক ভাবে ধাঁধিয়ে যেতে পারে চোখ।
প্রশ্নটা উঠছে, কারণ, শ্রীভূমির পুজো থেকে উঠে আসা আলো দেখে ষষ্ঠীর রাতে অভিযোগ করেছেন তিন পাইলট। তার পর থেকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কলকাতার এক অভিজ্ঞ পাইলট শনিবার বলেন, “তখন বেশ কয়েক দিন ধরে জিরোওয়ান রাইট (প্রধান রানওয়ের রাজারহাটের দিক) থেকে আমরা নামছিলাম। শ্রীভূমির পুজো যেখানে হচ্ছে, সেটা নামার সময়ে খানিকটা বাঁ দিকে পড়ে। নীচ থেকে আলো এলে সমস্যা তো হওয়ারই কথা।”
এই বিশেষ আলোর ব্যবস্থা যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের এক জন দাবি করেছেন, বার বার যেটিকে লেজ়ার আলো বলা হচ্ছে, সেটা আদৌ লেজ়ার ছিল না। ছিল ‘বিম’ আলো। লেজ়ার আলো অনেক সরু হয়, ‘বিম’ তুলনায় মোটা। যার নাম ‘ইন্টেলিজেন্ট লাইটিং মুভিং হেডস’ (সাধারণ ভাবে পরিচিত ‘পয়েন্টার’ বা ‘শার্পি মুভিং হেডস নামে)।
ওই পাইলটের কথায়, “লেজ়ারের আলো শুধু মনঃসংযোগই নষ্ট
করে না, তা চোখের পক্ষে ক্ষতিকারকও। কলকাতার আকাশে বছর তিনেক আগেও নামার সময়ে বার বার লেজ়ার আলোর শিকার হয়েছিলাম আমরা। তবে, এখন তা প্রায় বন্ধ। আর বিমের আলোয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ
ধাঁধিয়ে যায়। সাময়িক অন্ধত্ব তৈরি হয়। তাতে নামার সময়ে বিপদ ঘটতেই পারে।”
সূত্রের খবর, শ্রীভূমিতে এ
বার প্রায় ৬০টি এমন পয়েন্টার
বসানো হয়েছিল। আলো প্রেক্ষাপণে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় যে ধরনের আলোর খেলা চলে, সেটাকে বাস্তবায়িত করতেই ওই পয়েন্টার বসানো হয়েছিল। প্যান্ডেলের বিভিন্ন উচ্চতায় তা বসানো হয়েছিল যাতে গোটা প্যান্ডেলকে কভার করা যায়। সেখানে নীচের তলা থেকে উপরের দিকে আলো ফেলা হয়েছে।”
কতটা উচ্চতা পর্যন্ত এই আলো পৌঁছতে পারে?
অভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাটি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত এই আলো পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৩৩০০ ফুট। অথচ নামার সময়ে ওই এলাকায় বিমানের উচ্চতা থাকে প্রায় ২ হাজার ফুট। ফলে, বিমের আলো সহজেই পৌঁছতে পারে বিমানের কাছে।
সাধারণত ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’-তে এই ধরনের ‘পয়েন্টার’ ব্যবহার করা হয় বলেও অভিজ্ঞরা বলছেন। শ্রীভূমিতে আলোকসজ্জায় জড়িত এক ব্যক্তি বলেন, “শ্রীভূমির বুর্জ খলিফা ঝলমল করছিল ২০০টি এলইডি-পার লাইট দিয়ে। এই ২০০ এলইডি এবং ৬০ পয়েন্টার সফটওয়্যার মারফত নিয়ন্ত্রণও করা হচ্ছিল। এই কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছিল প্যান্ডেলের উল্টো দিকে একটি বাড়ির ছাদে। সেখানে বসে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে গ্রাফিক্সের খেলা।”