Calcutta High COurt

গলায় ঝরে পড়ছে উষ্মা, রায় মানবেন তো পুজোকর্তারা

দ্বিতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে জনতার ঢল নেমেছিল শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। অনেকেই মাস্ক গলার কাছে নামিয়ে দেদার ছবি তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৪১
Share:

বেপরোয়া: হাইকোর্টের রায়ে মণ্ডপে ঢোকা নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও সচেতন হলেন না সাধারণ মানুষ। একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপে ব্যারিকেডের সামনে ভিড়। ছবি: সুমন বল্লভ

তৃতীয়ার দিন এক ঐতিহাসিক রায়ে পুজো মণ্ডপগুলির ভিতরে এ বছর দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকি, মণ্ডপগুলিকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করতেও বলা হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েও পুজো উদ্যোক্তাদের বড় অংশেরই বক্তব্য, তৃতীয়ার বদলে আরও দিন পনেরো আগে এই নির্দেশ এলে ভাল হত। তাঁদের দাবি, পুজোর মাত্র তিন দিন আগে এমন নির্দেশ আসায় তাঁদের বহু টাকার ক্ষতি হতে চলেছে।

Advertisement

যদিও চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের বড় অংশেরই বক্তব্য, পুজো কমিটিগুলির নিজেদেরই তো সচেতন ভাবে এই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। তা হলেই আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হত না। রবিবার, দ্বিতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে জনতার ঢল নেমেছিল শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। অনেকেই মাস্ক গলার কাছে নামিয়ে দেদার ছবি তুলেছেন। প্রশ্ন করায় বলেছেন, “ভিড়ে ঘেমে যাচ্ছি, আর একটু ছবিও তুলব। তাই মাস্ক নামিয়েছি।” আর এক মাস্কহীন মহিলার আবার মন্তব্য, “প্রতিমা দর্শন করলেই সব সেরে যাবে। মাস্ক লাগবে না।” এই সব ভিড়ের চিত্রই এ দিন ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।

শ্রীভূমির পুজো উদ্যোক্তা তথা মন্ত্রী সুজিত বসু যদিও এ দিন আদালতের নির্দেশ শুনে বলেন, “সবাইকে মান্যতা দিয়েই বলছি, বাংলার সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে।” একডালিয়া এভারগ্রিনে এ দিন দুপুর থেকেই প্রবল ভিড় হতে দেখা যায় প্রতিমা দর্শনের জন্য। পুজোকর্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “আদালতের নির্দেশ আমাদের জন্য নয়। সে সব প্রশাসন বুঝবে। আমরা আমাদের মতো পুজো করব।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘রায় কার্যকর করার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের’

কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য আবার বললেন, “কোনও রকম নো-এন্ট্রি বোর্ড বা কন্টেনমেন্ট জ়োনের বোর্ড মণ্ডপের গায়ে ঝোলাব না। কোনও দর্শনার্থীকে আমরা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দিতেও পারব না।” বাগবাজারের মতো পুজোর উদ্যোক্তা গৌতম নিয়োগী যদিও বলছেন, “আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। কিন্তু পাড়ার লোকেদের অঞ্জলি দিতে বাধা দেব কী করে? আর পুজো প্রাঙ্গণে তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাই বা জারি করব কী করে? আরও আগে এই নির্দেশ এলে ভাল হত। অকারণ এত দিনের একটা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হত না।”

শ্রীভূমিতে বন্ধ হয়নি মণ্ডপে প্রবেশ। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমারের আবার দাবি, “বিপরীত পরিস্থিতিতে আমরা ক্লাবের লোকেরা একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। ছোট করে হলেও ব্যাপারটা করতে তো হতই। সত্যিই এই নির্দেশ আরও আগে এলে ভাল হত। পুজোর সঙ্গে যাঁদের জীবন-জীবিকা জড়িত, তাঁরা এই নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।”

আরও পড়ুন: পুজো প্যান্ডেলে দর্শক নয়, স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট

কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পুজো কমিটিগুলিরই কি আগে থেকে আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল না?

টালা বারোয়ারির পুজোর এ বার শতবর্ষ। উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বললেন, “সুরক্ষা সংক্রান্ত সব রকম পদক্ষেপ করে তবেই এগোনো হয়েছিল। আমরা না হয় কোনও মতে সামলে নেব, কিন্তু বহু পুজো কমিটি আর স্পনসরের টাকা পাবে না। শিল্পী থেকে কারিগর, সকলের পাওনা নিয়েই সমস্যায় পড়তে হবে।” মুদিয়ালি ক্লাবের পুজোকর্তা মনোজ সাউ আবার বললেন, “আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্যানিটাইজ়েশনের সব রকম ব্যবস্থা রেখেই বা লাভ কী হল? দ্রুত বৈঠকে বসে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করছি।”

সুরুচি সঙ্ঘের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস অবশ্য বললেন, ‘‘আদালতের রায়কে অমান্য করতে পারব না। তাতে যদি দর্শনার্থীরা ঢুকতে না পারেন, তা হলেও কিছু করার নেই। সরকারি নির্দেশেরও অপেক্ষায় রয়েছি। অন্য পুজোগুলির সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনায় বসব।’’ দমদম পার্ক ভারত চক্রের পুজোকর্তা প্রতীক চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। নবান্ন থেকে আমাদের যেমন নির্দেশ আসবে, সে ভাবেই এগোব।’’

‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসুর কথায়, “এক কথায় বলতে গেলে আমরা বিভ্রান্ত, আশাহত। গলিতে যে পুজো হয়, সেখানে মণ্ডপের কাছে ১০ মিটার পর্যন্ত আসতে দিলে দর্শনার্থীদের বার করব কোথা দিয়ে? আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েও বলব, আর কোনও পথ কি খোলা ছিল না?”

আরও পড়ুন: ত্রাতা আদালত, অতিমারির মহাবিপর্যয় থেকে রেহাই কলকাতা ও বাংলার

ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোকর্তা দেবাশিস কুমারের দাবি, “কোনও পথ খোলা আছে কি না, প্রশাসনই তা ঠিক করবে। আদালতের নির্দেশ কিন্তু পুজো কমিটির জন্য নয়। আমরা দর্শকশূন্য পুজো চেয়েছিলাম, তা-ই হচ্ছে। প্রশাসন বললেও খালি একটি নির্দেশ মানতে পারব না। মণ্ডপে ২৫ জন নয়, আমাদের শুধু পুরোহিত থাকবেন।” আদালতের নির্দেশের আগেই দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের উদ্যোক্তারা বললেন, “ধ্বংসের যে উৎসবের পথে আমরা হাঁটতে যাচ্ছিলাম, আদালত তাতে লাগাম পরাল। এই রায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement