রাজদেও গোয়ালা। —ফাইল চিত্র।
পনেরো বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশে পুলিশ যে দিন দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল, রাস্তায় বসে বাধা দিতে চেয়েছিলেন রাজদেও গোয়ালা। এত দিন পরে সেই দুলালবাবুর ভাইয়ের নাম দলের নতুন কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে প্রস্তাব করতে গিয়ে কর্মীদেরই বিক্ষোভে সভা ছাড়তে হল তাঁকে! দমদমের জোড়া খুনের ভূত ফিরে এল সিপিএমকে তাড়া করতে!
জোনাল কমিটি ভেঙে দিয়ে এবং একাধিক লোকাল কমিটি মিশিয়ে দিয়ে এখন নতুন এরিয়া প্রস্তুতি কমিটি তৈরি করছে সিপিএম। রাজ্য জুড়ে সংগঠনের এই ছাঁচ ভাঙায় বিতর্কও বাধছে। তিনটে করে লোকাল কমিটিতে যাঁরা সদস্য ছিলেন, তাঁদের সকলকে এরিয়া কমিটিতে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। তাতে বিক্ষুব্ধের সংখ্যা বা়ড়ছে। কিন্তু দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, নির্দিষ্ট কলেবরের মধ্যেই যথাসম্ভব স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা-কর্মীদের নিয়ে এরিয়া কমিটি গড়ে ফেলতে হবে। উত্তর কলকাতার কাশীপুর-বেলগাছিয়া জোনাল ভেঙে এরিয়া প্রস্তুতি কমিটি গড়ার কাজ পণ্ড হয়ে গিয়েছে এই ভাবমূর্তির প্রশ্নেই।
পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে বুধবার প্রায় সাড়ে তিনশো সদস্যের উপস্থিতিতে এরিয়া প্রস্তুতি কমিটি গঠন হচ্ছিল। কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রাজদেও এবং দেবাঞ্জন চক্রবর্তী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নতুন কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে রাজদেওবাবু বাবিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করা মাত্রই এলাকার বেশ কিছু তরুণ কর্মী প্রতিবাদ করেন। তাঁদের আরও প্রশ্ন, শান্তা পাল বা কুমার দে-র মতো নেতাদের বাদ দিয়ে বাবিন, তরুণ নাহা রায়, সন্ধ্যা মিশ্র, মনি সামন্তদের কেন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হচ্ছে? এঁদের সকলকে নিয়েই এলাকায় ভাবমূর্তি সংক্রান্ত প্রশ্ন আছে। এই প্রতিকূলতার বাজারেও স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘কাছের মানুষ’ নেতাদের বাদ দিয়ে যাঁদের আনতে চাওয়া হচ্ছে, তা রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশিকার পরিপন্থী! কর্মীদের প্রশ্ন ও ক্ষোভের মুখে বানচালই হয়ে যায় সভা।
সিঁথি উত্তর ও দক্ষিণ এবং পাইকপাড়ার লোকাল কমিটি ওই এরিয়া কমিটিতে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু বাবিনবাবু প্রভাব খাটিয়ে নতুন কমিটিতে সিঁথির বেশি লোককে ঢোকাতে চেয়েছেন বলে দলেরই একাংশের অভিযোগ। এলাকায় সদস্যসংখ্যার অনুপাতে প্রস্তাবিত কমিটিতে প্রতিনিধি পায়নি পাইকপাড়া। তবে এর চেয়েও বড় প্রশ্ন নেতাদের ভাবমূর্তি নিয়ে। স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘যাঁদের জন্য এই এলাকায় সংগঠনটা ধ্বংস হয়ে গেল, তাঁদেরই নতুন কমিটিতে রাখা হবে গ্রহণযোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রদের বিষয়টি দেখা উচিত।’’
যোগাযোগ করা হলে রাজদেওবাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সভায় কিছু কথা হয়েছিল। কিন্তু গোলমাল হয়নি।’’ দেবাঞ্জনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কিছু সমস্যা কোথাও কোথাও হচ্ছে। সেগুলোও মিটিয়ে ফেলা হবে।’’ আগামী ২৯ অগস্ট রাজ্য কমিটির বৈঠকে আসন্ন সম্মেলনের নির্ঘণ্ট ঠিক হওয়ার সময়ে এরিয়া কমিটির সমস্যাও আলোচনায় আসতে পারে।