তৃণমূলের হিসেব নিয়ে দ্বৈরথে বাবুল-অভিষেক

এক জনকে দলের তরুণ মুখ হিসেবে তুলে ধরছে বিজেপি। অন্য জন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’। সংসদের ভিতরে-বাইরে তাঁদের ‘দ্বৈরথ’ পরিচিত। সংসদের বাইরে বিতর্কসভাতেও দু’জনের ধুন্ধুমার লড়াই বাঁধে। এ বার সেই চৌহদ্দি পেরিয়ে শনিবার কলকাতা পুরসভার ভোট-প্রচারেও উত্তাপ বাড়াল সেই বাবুল সুপ্রিয় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১০
Share:

দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শনিবার কালীঘাটে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

এক জনকে দলের তরুণ মুখ হিসেবে তুলে ধরছে বিজেপি। অন্য জন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’। সংসদের ভিতরে-বাইরে তাঁদের ‘দ্বৈরথ’ পরিচিত। সংসদের বাইরে বিতর্কসভাতেও দু’জনের ধুন্ধুমার লড়াই বাঁধে। এ বার সেই চৌহদ্দি পেরিয়ে শনিবার কলকাতা পুরসভার ভোট-প্রচারেও উত্তাপ বাড়াল সেই বাবুল সুপ্রিয় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজা।

Advertisement

সিবিআইয়ের কাছে তৃণমূল জমা দেওয়া দলের আয়-ব্যয়ের হিসেবকে বিভ্রান্তিমূলক বলে বিরোধীরা অভিযোগ শানাচ্ছে। বিরোধীদের প্রতিহত করতে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুলের নাম না করে রোজ ভ্যালির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মমতার আক্রমণের জবাবে এ দিন বাবুলের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ছবি বিক্রি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। আগে জানা গিয়েছিল, তাঁর একটা ছবি ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন উনি বলছেন, ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে!’’

তাঁর নেত্রী তথা পিসিকে আক্রমণ করায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ বাবুলকে আক্রমণ করে যুবরাজ বলেন, ‘‘তৃণমূল আয়-ব্যয়ের হিসেব সিবিআইকে জমা দিয়েছে। সেই হিসেবে কী রয়েছে, তা বাবুল সুপ্রিয় জেনে যাচ্ছেন! তা হলেই বুঝুন কী ঘটছে!’’ বিজেপিই প্রকারান্তরে তৃণমূলকে হেনস্থা করতে সিবিআইকে দিয়ে নোটিস পাঠিয়েছে, পিসির মতো সে কথা বোঝাতেই অভিষেকের এমন মন্তব্য বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা। শিল্পী হিসেবে রোজ ভ্যালির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে মমতার আক্রমণের জবাবেও বাবুলের কটাক্ষ, ‘‘ডেলোয় বৈঠক আর বিনোদন শিল্পীর কাজ এক নয়। ওঁর দলের যুক্তিবোধ সম্পন্ন লোকেরা নিশ্চয়ই তা ওঁকে বোঝাবেন!’’ বাবুলকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে দলনেত্রীর সুরেই এ দিন তৃণমূলের আর এক তরুণ সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, ‘‘মদন মিত্র একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে ফুলের প্রশংসা করায় জেলে রয়েছেন। তা হলে বাবুল সু্প্রিয়ও জেলে থাকবেন না কেন?’’

Advertisement

নাগাড়ে তৃণমূলের আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে রাজনৈতিকভাবে তার মোকাবিলার ইঙ্গিত দিয়ে বাবুল বলেন, ‘‘আসানসোলে যখন ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম, আমাকে মদ্যপ বলা হয়েছিল। অস্ত্র আইনে মামলাও হয়। তবু ওদের ১০ গোল দিয়েছিলাম। এ বার হয়তো ১২ গোল দেব!’’

কিন্তু শুধু বাবুলের সঙ্গে তৃণমূলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণেই মমতার ছবি বিক্রির হিসেবের বিতর্কের অবসান হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে মমতার ছবি বিক্রির আয় নিয়ে কটাক্ষ করেন, ‘‘উনি আজ যা বলেন, কাল সেটাকেই ভুল বলেন! কোটি টাকার ছবি কী করে যে লক্ষ টাকা হল, জানি না!’’ ঘনঘন মমতার অবস্থান বদলকে কটাক্ষ করে সূর্যবাবুর তির্যক মন্তব্য, ‘‘ছবি বিক্রির ব্যাপারে উনি কাল কী বলেন, তার জন্য অপেক্ষা করুন।’’

ছবি বিক্রির আয় নিয়ে মমতার দেওয়া তথ্য অসত্য বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও। বড়বাজারে এ দিন ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী সুনীতা ঝাওয়ারের প্রচারসভায় তিনি বলেন, ‘‘উনি (মমতা) এখন বলছেন, ছবি বিক্রি করে ২ কোটি টাকা পেয়েছেন। অথচ, ২০১২-’১৩ সালে আয়কর দফতরে তৃণমূল যে তথ্য জমা দিয়েছিল, সেখানে বলেছিল, ছবি বিক্রি থেকে ৬ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। তা হলে এখন বাকি ৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা কোথায় গেল?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জেলে বসে সুদীপ্ত সেন বলছেন, তিনি ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় তৃণমূল নেত্রীর ছবি কিনেছেন। আর উনি ২০ লক্ষ টাকায় ছবি বেচেছেন বলছেন। কার কথা সত্য?’’

ছবি আঁকাই যে মুখ্যমন্ত্রীর একমাত্র কাজ নয়, তা মনে করিয়ে দিতে সিদ্ধার্থনাথের কটাক্ষ, ‘‘ভাল রাস্তা, চাকরি, সুশাসন, কৃষক আত্মহত্যা বন্ধের আশায় মানুষ ওঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল। কিন্তু উনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন! ছবি আঁকার জন্য তো ওঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেনি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement