প্রতীকী ছবি।
কোনও করোনা রোগী ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের কবলে পড়েছেন কি না, তা জানতে ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বাংলায় দৈনিক সংক্রমণ এত দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এখন আর পজ়িটিভ রিপোর্ট আসা সব রোগীর ওই পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য একটি বিশেষ বিদেশি কিট লাগে। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ। কিট সরবরাহ থেকে ব্যয় বহন— সবই করে কেন্দ্র। সব থেকে বড় বিষয় হল সময়। এক-একটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করতে সময় লাগে ৭২ ঘণ্টা। অর্থাৎ তিন দিন। কারণ বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তবেই আসে জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, কিটের অপ্রতুলতা এবং বেশি সময়— মূলত এই দু’টি কারণে দেরি হচ্ছে জিনোম পরীক্ষায়।
করোনাভাইরাসের নয়া ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের হদিস পেতে গত কয়েক দিন ধরে জিনোম সিকোয়েন্সের উপরেই নির্ভর করছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, কেউ ওই ভাইরাসের কোন প্রজাতিতে আক্রান্ত, তা জানতে গেলে লালারসের নমুনার এই বিশেষ পরীক্ষাই একমাত্র পথ। রাজ্যে এই পরীক্ষা হয় শুধু কল্যাণীর জাতীয় স্তরের গবেষণা কেন্দ্র ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এক সপ্তাহে দেড় হাজার নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় সেখানে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওখানে সপ্তাহে দু’দিনে কয়েক হাজার করে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। শেষ সাত দিন ধরে তেমন রিপোর্টই আসছে না। যাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে যাঁর বিদেশ-যোগ আছে, শুধু তাঁর বা তাঁদের রিপোর্টই পাওয়া যাচ্ছে। ওঁরাই বা কী করবেন! এত নমুনা জমে গেলে সমস্যা তো হবেই।”
কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যে প্রথমে বিদেশ থেকে আসা পজ়িটিভ রোগীদের লালারসের নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা শুরু হলেও পরে পরিকল্পনা বদল করা হয়। রাজ্যে হুহু করে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করায় স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে, কলকাতা পুর এলাকা, বিধাননগর ও নিউ টাউন এলাকার বাসিন্দাদের আরটিপিসিআর পরীক্ষায় পজ়িটিভ রিপোর্ট এলে এবং ভাইরাল লোড ৩০-এর নীচে থাকলে সেই নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সে পাঠাতে হবে। তার পরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জানানো হয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলায় ‘এস জিন টার্গেট ফেলিয়োর টেস্ট’ করা হবে। যাতে প্রচলিত আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যাবে, পজ়িটিভ রোগীর ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। যদি লালারসের নমুনায় এস জিনের অস্তিত্ব না-মেলে, তা হলে রোগীকে ‘আইসোলেশন’ বা নিভৃতবাসে পাঠানোর পাশাপাশি সেই নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নোডাল কেন্দ্র করা হয় স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে। তার পরেই সপ্তাহে দু’দিন সব জায়গা থেকে নমুনা জমা পড়তে শুরু করে এবং সেখান থেকে তা কল্যাণীতে পাঠানো শুরু হয়।