প্রতীকী ছবি।
স্বামী চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁকে বাড়িতে রেখে কাছেই এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন আদিবাসী বধূ। সেই গ্রামে তিনি গণধর্ষণের শিকার হন বলে দাবি পুলিশের। পরিবারের লোকের অভিযোগ, বছর চল্লিশের মহিলাকে ভুট্টা খেতে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হয়। তাঁর আর্ত চিৎকার আটকাতে প্রথমে মুখে রুমাল গুঁজে দেওয়া হয়। তাতেও গোঙানি বন্ধ না হওয়ায়, মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় একটি মোবাইল। পুলিশের দাবি, মৃত্যুর আগে অভিযুক্তদের মধ্যে দুই ‘পরিচিতের’ কথা তো বটেই, তার সঙ্গে এমনই কিছু তথ্য তাদের জানিয়ে যেতে পেরেছেন ওই নির্যাতিতা। এই তথ্য তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে দাবি পুলিশ সূত্রে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমায় সোমবার ওই ঘটনার পরে, গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মহিলা। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। ঘটনায় দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল পরিবার। জেলার পুলিশ সুপার রাহুল দে জানান, প্রথমে মারধর, যৌন নিগ্রহের মামলা রুজু করা হয়। এ দিন গণধর্ষণ এবং খুনের ধারাও জোড়া হয়। তিনি বলেন ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’
ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বামেদের দাবি, মূল অভিযুক্ত শাসক দলের কর্মী। ওই দু’জনকে দলীয় সমর্থক হিসাবে মেনেছেন তৃণমূল নেতা সন্তু রায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা আমাদের দলের সমর্থক। খবর পেয়ে অসুস্থ ওই মহিলাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’’ যদিও ব্লক এবং জেলা তৃণমূলের নেতারা অভিযুক্তদের ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির লোক বলে দাবি করেন। তবে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির উত্তরবঙ্গের সভাপতি এবং আদিবাসী সংগঠন ‘সেঙ্গেল অভিযান’-এর নেতা বিভূতি টুডু বলেছেন, ‘‘জেলায় দিশম পার্টির সংগঠন নেই। ঘটনায় জড়িতদের চরম শাস্তি চাইছি।’’
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সোমবার পাশের একটি গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মহিলা। এক মহিলা তাঁকে বিয়েবাড়ি থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। তার পরেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হয় বলে দাবি। মঙ্গলবার গ্রামের আর এক বাসিন্দার বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে উদ্ধার করেন। সে দিনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার গঙ্গারামপুর থানায় দু’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার কাকা। পুলিশ বৃহস্পতিবার হাসপাতালে মহিলার জবানবন্দি রেকর্ড করে। যিনি তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি, সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদকরা হচ্ছে।
ঘটনার কথা জানাজানি হলে অভিযুক্তদের তরফে তাঁদের নানা হুমকি দেওয়া হয় বলে মৃতার পরিবারের অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মূল দুই অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালায়। ওই বধূর স্বামীর আক্ষেপ, ‘‘চলতে-ফিরতে পারি না। কোথায় যাব, কার কাছে বললে বিচার পাব, কিছুই বুঝতে পারছি না!’’ দেহ বালুরঘাট মর্গে আনা হলে নির্যাতিতার ছেলে বলেন, ‘‘মায়ের এ দশা যারা করল, তাদের ফাঁসি চাই।’’