পর্যটকদের ফেরাল না ব্যতিক্রমী ডুয়ার্স

আজ বাদে কাল দার্জিলিং ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু খুচরো না পেলে হোটেল বিল মেটাবেন কী করে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৩
Share:

রাজাভাতা খাওয়ায় পর্যটকেরা। — নারায়ণ দে

আজ বাদে কাল দার্জিলিং ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু খুচরো না পেলে হোটেল বিল মেটাবেন কী করে?

Advertisement

কলকাতার কালীঘাটের বাসিন্দা সোমনাথ দাশগুপ্তের এখন এটাই একমাত্র চিন্তা। কারণ বুধবার থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষ ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক খুললেই তো হল না। লম্বা লাইন হবে। আমরা সুযোগ পাব কিনা জানি না। নতুন নোট না পেলে ভাড়া মেটাবো কি ভাবে?’’

সোমনাথবাবু একা নন, পাহাড়ে থাকা কয়েক হাজার পর্যটকের এখন এটাই মাথাব্যাথা। যাঁরা অন-লাইনে বিল মিটিয়েছেন, বা অগ্রিম জমা রেখেছিলেন তাঁরা দুর্ভোগ এড়ালেও, হাতে টাকা নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা নাকাল হয়েছেন। সল্টলেকের বাসিন্দা সৃজিত মুখোপাধ্যায় এ দিন টাইগার হিল সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বাস করুন, পকেটে তো পাঁচশো আর হাজার নোট। তাই পেটে দানাপানিও পড়েনি।’’

Advertisement

দার্জিলিঙের কিছু হোটেলে আবার অগ্রিম বুকিং না থাকলে পর্যটকদের ঘরও দেওয়া হয়নি। একটি হোটেলের ম্যানেজার আকতার বলেন, ‘‘ট্র্যাভেল এজেন্সি এবং অন-লাইনে বুকিং করে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরই এ দিন ঘর দিয়েছি। না হলে বিল মেটানো নিয়ে খুবই সমস্যা হবে।’’

তাই পর্যটকদেরও দুর্ভোগও জারি। এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমেছেন আমদাবাদের বাসিন্দা বিজয় শঙ্কর। এ দিন সকালে বিমানে ওঠার আগে একশো টাকার বেশি নোট জোগাড় করতে পারেননি। বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘এতদূরে এসেছি। সবই অচেনা। কী ভাবে সামাল দেব বুঝতে পারছি না।’’

কিছু গাড়ি চালক অবশ্য বাতিল নোট নিয়েছেন। স্থানীয় ট্যুর অপারেটররাও অনেক পর্যটকদের বাতিল নোট ভাঙিয়ে দিয়েছেন। কোনও কোনও খাবারের হোটেল পর্যটকদের থাকার জায়গার ঠিকানা রেখে ‘বাকি’তেও বিক্রি করেছেন। যদিও তাঁরা হাতেগোনা। মোটের উপর এ দিন শৈলশহরে দুর্ভোগেই কাটাতে হয়েছে পর্যটকদের।

রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে বিপাকে পর্যটকরা। তিনি বলেন, “ এই সময় ডুয়ার্সের ভরা পর্যটন মরশুম। বহু পর্যটন বিভিন্ন জায়গা থাকে ভিড় জমিয়েছেন। অধিকাংশের কাছেই পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট। বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পর্যটন ব্যবসায় মধ্যে প্রভাব পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে সময় লাগবে।”

রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহও বলেন, ‘‘পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল হয়েছে। ফলে আমাদের সরকারি লজগুলিতে ওই টাকা নেওয়া যাবে না।’’

বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনও বলেছেন, ‘‘পর্যটকদের বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে জানি কিন্তু আমরা নিজেরাই তো কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বিভ্রান্ত। এখন আমাদের দফতরের হাতে যে নোট রয়েছে তা ট্রেজারির মাধ্যমে ভাঙানোটাই তো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে আর নতুন নোট গ্রহণ করে বিড়ম্বনা বাড়াবার মত পরিস্থিতিই নেই।’’

তাই পর্যটকদের চিন্তা বহুগুণ বাড়িয়ে ডুয়ার্সের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র গরুমারা জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টারে ৫০০ এবং ১০০০টাকার নোট গ্রহণ করা হবে না বলে ডিএফওর আদেশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বড় নোট নিয়ে বেড়াতে আসলে সুবিধা হয় এই ভেবে পর্যটকেরা ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট নিয়ে ডুয়ার্সে এলেও খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই তা না নেওয়ায় কত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়া যায় তা নিয়েই তারা পরিকল্পনা শুরু করে ফেলেছেন পর্যটকরা। লাটাগুড়ির টিকিট কাউন্টারের সামনে অনুরোধ,তর্ক সব কিছুই চললেও চিড়ে অবশ্য ভেজেনি।

এরই মধ্যে ব্যাতিক্রমী ছবিও দেখা গেল ডুয়ার্সেই। বিনয় বাবুরা না পারলেও বেসরকারি পর্যটন ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছেন পর্যটকদের সাহায্যে। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সচিব দিব্যেন্দু দেব যেমন লাটাগুড়ি এলাকার রিসর্ট মালিকদের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গ্রহণ করে পর্যটকদের পাশে দাঁড়াতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার পক্ষে সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পর্যটন ব্যবসায় উপার্জিত অর্থ তা ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটই হোক না কেন গ্রহণ না করার কোনও মানে হয় না।’’ যেখানে টাকা জমা দেবার জন্যে ৫০ দিন সময় রয়েছে সেখানে বনদফতরেরও দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দেন।

মালবাজারের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া পর্যটকদের জন্যে বিখ্যাত একটি খাবারের হোটেলের কর্ণধার কার্তিক কর্মকার যেমন এ দিন ৫০০ এবং ১০০০টাকার নোট গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটকরা এমনিতেই ভেঙে পড়েছেন। খাবারের দোকান থেকে তাঁদের ঘুরিয়ে দেওয়া হলে ডুয়ার্স সম্পর্কে তাদের মনোভাবই বদলে যাবে। তাই নিজের পরবর্তীতে ব্যাঙ্কে দীর্ঘ লাইন দিতে হলেও নোট নিতে আপত্তি করিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement