Corona Vaccination

উপসর্গহীনকে টিকা! বিভ্রান্তি নির্দেশিকায়

করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, করোনা আক্রান্তদের ১৪ দিনের আগে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্যজুড়ে জোর কদমে চলছে করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগ। কিন্তু করোনা সংক্রমিত অবস্থায় কি প্রতিষেধক নেওয়া যাবে? এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ জবাব ‘না’ হলেও নির্দেশিকা ঘিরে বিভ্রান্তি রয়েছে খোদ চিকিৎসক মহলেই।

Advertisement

করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, করোনা আক্রান্তদের ১৪ দিনের আগে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না। কিন্তু করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দেখে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে না। যাঁদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা অসম্ভব ধরে নিয়েই নির্দেশিকায় উপসর্গহীনদের প্রতিষেধক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু করোনা রোগীদের একটাবড় অংশই তো উপসর্গহীন! ফলে, করোনা সংক্রমিত অবস্থাতেই হয়তো অনেকে প্রতিষেধক নিয়ে নেবেন। জটিলতা এখানেই।

চিকিৎসক মহলের একাংশে ইতিমধ্যে এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। টিকাকরণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে স্বাস্থ্যকর্মীদের কয়েকজন এই প্রশ্ন তুলেও স্পষ্ট জবাব পাননি। সবংয়ের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ কান্ডার মানছেন, “আমরা এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। কারণ এখন তো ৮০ শতাংশের বেশি উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত। কিন্তু আমাদের নির্দেশিকা মেনেই কাজ করতে বলা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের বক্তব্য, ‘‘গণ-টিকাকরণের ক্ষেত্রে উপসর্গহীনদের আলাদা করা সম্ভব নয়। কিন্তু যাঁরা উপসর্গযুক্ত করোনায় আক্রান্ত, তাঁরা প্রতিষেধক নিলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বারণ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

আপাতত নির্দেশিকা অনুযায়ীই চলছে কাজ। কোনও উপসর্গ না থাকলেই তবেই দেওয়া হচ্ছে করোনার প্রতিষেধক। এখন স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিষেধক পাচ্ছেন। পরের ধাপে পুলিশকর্মীরা পাবেন। অবশ্য এই করোনা যোদ্ধাদের কেউ উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত কি না, সেটা পরীক্ষা ছাড়া বোঝা অসম্ভব। অথচ টিকাকরণের আগে সকলেরপরীক্ষা করাও সম্ভব নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলছেন, “উপসর্গ রয়েছে কি না, সেটা চিকিৎসকেরা দেখে নিচ্ছেন। কিন্তু উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত নির্দেশিকা কিছু নেই। তাই কয়েকটি প্রশ্ন থাকছেই।” খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “সকলের পরীক্ষা করে প্রতিষেধক দেওয়া অসম্ভব। উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্তকে ১৪ দিন পর্যন্ত প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না। কিন্তু উপসর্গহীনদের টিকা দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।” এই সংশয় কাটাতে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও।

চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, সংক্রমণ কতটা শক্তিশালী তার উপর পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে। সংক্রমণ শক্তিশালী হলে উপসর্গ দেখা যায়। উপসর্গহীনদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ দুর্বল হয়। তাই উপসর্গহীনদের টিকা প্রয়োগে সমস্যা নেই বলেই মনে করছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অশোক পাল। একই দাবি করছেন বেলদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডলও। বিষয়টি আরও সরল করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ চারজেলার জন্য নিযুক্ত প্রতিনিধি চিকিৎসক শুভদীপ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “যাঁরা উপসর্গহীন, তাঁদের শরীরে ইতিমধ্যেই অ্যান্টিবডি সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু উপসর্গযুক্তদের অ্যান্টিবডি দুর্বল। আবার শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনো ভাইরাসে তৈরি এই কোভিশিল্ড কার্যকর হতেও শরীরে অ্যান্টিবডির প্রয়োজন হয়। তাই করোনা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার সময়ে কোভিশিল্ড প্রয়োগ হলেশরীর একসঙ্গে দু’টির জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না। তাই এই দু’রকম নিয়ম।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement