নিপা, নাম শুনেই দাদার কথা মনে পড়ল তরুণ মজুমদার
হঠাৎ সেই পুরনো দিনগুলোয় ফিরে গিয়েছি। এগারো বছর আগের সেই গ্রীষ্মকাল, এমনই আম-লিচুর ভরা মরসুম। শুধু, আমাদের গ্রামের বাড়ি মুখ কালো করে মৃত্যুর অপেক্ষা করছে যেন!
সপ্তাহ ঘোরার আগেই একে একে চলে গেলেন আমার দুই খুড়তুতো ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী আর আমার এক জামাইবাবু। জ্বর, গায়ে ব্যথা, চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু। কেউ বুঝতেই পারলেন না কেন?
আমি তখন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম আমিও। পরে অবশ্য বোঝা গিয়েছিল আমার নিছকই ভাইরাল ফিভার। কিন্তু বাকিদের? দিল্লিতে রক্তের নমুনা পাঠিয়ে শেষ তক জানা গিয়েছিল ‘নিপা ভাইরাস’। সেই নিপার নাম শুনে ফের এগারো বছর আগে ফিরে গিয়েছি যেন!
নদিয়ার বেতাইয়ে আমাদের মজুমদার পরিবার বেশ পরিচিত। সেই পরিবারে নিপার প্রথম শিকার আমার খুড়তুতো দাদা তাপস। বছর পঁয়ত্রিশ বয়স, জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরল, তেহট্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পরের দিন। চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরের দিনই মারা গেলেন দাদা। পরের দিন, দাদার স্ত্রী জ্বরে পড়লেন, তিন দিনের মাথায় শক্তিনগর হাসপাতালে সব শেষ। বৌদিকে দাহ করে ফিরেই জ্বরে পড়ল ছোট ভাই তিমির (২৩)। এক দিনের জ্বরে মারা গেল সেও। দিন তিনেকের মাথায় কলকাতার হাসপাতালে মারা গেলেন জামাইবাবু নিত্যগোপাল সরকার (৩৫)।
বাড়ি থেকে আমরা তখন কোথাও পালাতে পারলে বাঁচি! এ ওর মুখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছি না, যেন ঝুলে আছে একটাই প্রশ্ন— এর পরে কে?
আমিও মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আমার চিকিৎসা হয়েছিল আরজিকর হাসপাতালেই। দিন কয়েক হাসপাতালে থাকার পরে অবশ্য সেরে উঠেছিলাম। কিন্তু ভেঙে পড়েছিলাম খুব। তখনই শুনলাম, দিল্লি থেকে রক্তের নমুনার রিপোর্ট এসেছে ‘নিপা ভাইরাস’।
শুনলাম বাদুড়-বাহিত রোগ। সেই থেকে লিচু খেতে বড় অস্বস্তি হয় জানেন। তাপসদা আর বৌদি, লিচু খেতে বড় ভালবাসত যে!