মেদিনীপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিচ্ছেন চিকিৎসক মবিবুল শেখ। নিজস্ব চিত্র।
রাত তখন ৯টা। অসুস্থ এক প্রসূতির রক্তের ব্যবস্থা করতে দিশেহারা তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জন্য অনুনয় করছেন তাঁরা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাতৃমাতে ভর্তি ওই প্রসূতি মার জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্থানীয় সমাজকর্মী ফকরুদ্দিন মল্লিক। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে রক্তদান করলেন হাসপাতালের চিকিৎসক মহিবুল শেখ। জীবন বাঁচল প্রসূতি মা এবং তাঁর সন্তানের।
মঙ্গলবার রাতে সাড়ে ১২টা নাগাদ রক্ত দেওয়ার পরেই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সাবিনা খাতুন নামে ওই প্রসূতি। বুধবার সকালে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
ফকরুদ্দিন বলেন, ‘‘যখন দেখলাম ওঁরা কোনও মতেই রক্ত জোগাড় করতে পারছেন না, তখন ওঁদের সঙ্গে কথা বললাম। একটু আশ্বস্ত করার জন্য বললাম, ‘ঠিক আছে দেখছি, ব্যবস্থা করে দেব’। এক-দু’জনকে ফোন করে না পেয়ে ফোন করলাম ডাক্তার বন্ধু মহিবুলকে। ও জানাল সার্জারিতে নাইট ডিউটিতে আছে। জানালাম, রোগীর অসস্থা ভাল নয়। শোনা মাত্র বলল, ‘আমি যাচ্ছি’। তখন রাত্রি প্রায় সাড়ে ১২টা। কিছুক্ষণের মধ্যে মহিবুল চলে এল ব্লাড ব্যাঙ্কে। রক্ত দিয়ে আবার চলে গেল সার্জারি বিভাগে। সত্যি আমি গর্বিত এবং আনন্দিত এই রকম ভালোবাসার বন্ধু পেয়ে।’’
মহিবুল বলেন, ‘‘সার্জারি বিভাগে কাজ করার কারণে মাঝে মধ্যেই রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জন্য। সে সময় যোগাযোগ করে থাকি বন্ধু ফারুকের সঙ্গে। সে সহযোগিতা করে থাকে। যখন গতকাল ফারুক বিষয়টা জানালো, তখন আমি রক্ত দেওয়ার তখন নাইট ডিউটি করছিলাম। নতুন রোগীর চাপ ছিল না। ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দিয়ে এলাম। শুনেছি ওই প্রসূতি ভালো আছেন এবং তাঁর সদ্যোজাত কন্যা সন্তান সুস্থ আছে।’’
খড়গপুর গ্রামীণের বাসিন্দা সাবিনা এই প্রথম মা হলেন। তাঁর মা সাইজাদি বিবি জানালেন, এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে সাবিনার। মঙ্গলবার রাত ৯ টায় ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। প্রচণ্ড রক্তপাতের কারণে অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। সাবিনার শাশুড়ি ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘ভগবানের মতো এগিয়ে এসেছেন ওই ডাক্তার। না হলে দুটো জীবন বাঁচত না।’’