R G Kar Hospital Incident

শুভেন্দু চাইলেও কেন্দ্র বঙ্গে ৩৫৬ জারির পক্ষে নয়

১৯৮৮ সালের সারকারিয়া কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে যত বার কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০২
Share:

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।

আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছেন খোদ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ছাড়াও আরও কিছু শিবির থেকে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি উঠলেও, কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন (সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ) জারি করার পক্ষপাতী নয় কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদী সরকার মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে সর্বাগ্রে তার আইনি বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠবে। যাতে কেন্দ্রের হেরে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে এক দিকে যেমন বিজেপির মুখ পুড়বে, তেমনি ‘শহিদের’ মর্যাদা পেয়ে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন ভোটে যার ফায়দা ঘরে তুলবে তৃণমূল। তাই এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে কোনও ভাবেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষপাতী নয় কেন্দ্র।

Advertisement

১৯৮৮ সালের সারকারিয়া কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে যত বার কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধী দলকে শায়েস্তা করতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছে কেন্দ্রের শাসক দল। বিজেপির বক্তব্য, একা ইন্দিরা গান্ধীই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৪৮ বার বিভিন্ন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, দল অন্তত সেই পথে হাঁটতে রাজি নয়।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সেই রিপোর্টে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশের উল্লেখ রয়েছে কি না, তা নিয়ে রাজ্যপাল বা কেন্দ্র উভয়েই নীরব। কিন্তু শুভেন্দু ইতিমধ্যেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে সরব হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়লে সে ক্ষেত্রে রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে কেন্দ্র। আর জি কর-কাণ্ড ঘিরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে নেমেছে ঠিকই, কিন্তু রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সামগ্রিক ভাবে অবনতি হয়েছে, এ কথা বলা কঠিন। জনতা শাসক শিবিরের উপরে ক্ষুব্ধ হলেও সরকারের পক্ষে এখনও যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়ক রয়েছেন।
ফলে সরকার পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বা রাজ্যে বড় কোনও আর্থিক বিশৃঙ্খলা বা বহিঃশত্রুর আক্রমণের পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি।

Advertisement

ফলে এই আবহে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে আইনি পথে তার চ্যালেঞ্জ জানাবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তা হলে আদালতে পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রের। ২০১৬ সালে হিমাচলপ্রদেশে কংগ্রেসের কাছে যথেষ্ট বিধায়কদের সমর্থন নেই, এই যুক্তিতে প্রথম বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু এস আর বোম্মাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আইনসভায় ভোটাভুটি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের একমাত্র পথ—এই যুক্তিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় দেহরাদূন হাই কোর্ট। পশ্চিমবঙ্গেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে তা নিয়ে আদালতে মামলা হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কেন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল, তার যথার্থ যুক্তি তুলে ধরা সহজ হবে না। ফলে আইনি পথেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার সিদ্ধান্ত খারিজ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।”

অন্য দিকে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এমনিতেই মমতার জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। সেই আবহে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলে উল্টে সহানুভূতির হাওয়া বইবে মমতার পক্ষে। যা তাঁর দল কাজে লাগাবে ভোটে। তাই অহেতুক রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে মমতাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার পক্ষপাতী নন বিজেপির
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement