পরিদর্শনে মানস ভুঁইয়া। নিজস্ব চিত্র
বাড়তে বাড়তে বন্যার জল পৌঁছে গিয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের তারের কাছে। দুর্ঘটনা এড়াতে তাই বন্ধ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। তাতেই অন্ধকারে ডুবেছে একাধিক গ্রাম। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ব্লকের চেহারাটা এমনই। সাতদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকার মানুষ। বারবার প্রশাসনকে বলেও সুরাহা না হাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা।
ভাগীরথীর এক পাড়ে রয়েছে পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা ও হালতচড় গ্রাম। অন্য পাড়ে নদিয়ার বেথুয়াডহরি। এই দুই প্রান্তে রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি। ডিভিসি জল ছাড়ায় উঠে এসেছে জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই এমন হয়। দিনের পর দিন বিদ্যুৎ দফতরে খবর দিয়েও লাভ হয়নি। শনিবার সেই কারণেই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে গ্রামের বাসিন্দাদের। বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। যদিও স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘নদীর জল মারাত্মক বেড়েছে। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলে যে কোন সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ পাল্টা বাসিন্দারা বলছেন, অনেকবার তার উঁচু করার কথা বলা হয়েছে, কেউ তোয়াক্কা করেনি।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে খানাকুলেও। সেখানে অবশ্য ক্ষোভ নদীবাঁধ নিয়ে। প্রতিবছরই বৃষ্টির দাপট বাড়লে খানাকুলে শুরু হয় তীব্র জল যন্ত্রণা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোট আসে-যায়, কিন্তু বাঁধের সংস্কার হয় না। প্রতিবার দুর্বল নদীবাঁধের ভাঙনে প্লাবিত হয় খানাকুল। এ বারে বন্যাতেও খানাকুল বিধানসভা এলাকার রাজহাটি, জগতপুর, ঠাকুরানীচক, মারোখানা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখন বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে জলের তলায়। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। বাঁধ নিয়ে তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামের মানুষেরা। শনিবার খানাকুলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন জেলাশাসক দীপপ প্রিয়া। পরে তিনি বলেন, ‘‘কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখন তা হিসাব করা যায়নি। ছ’ফুট উচ্চতায় জল এখনও রয়েছে। দ্রুত জল নামলে বাকি কাজ শুরু হবে।’’
খানাকুলের মতো ঘাটালের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পুর এলাকার ১৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিই জলমগ্ন। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেশ কয়েকটি অংশ থেকে জল নামতে শুরু করায় অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। জেলায় ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা ১২০ থেকে কমে হয়েছে ৫১। ইতিমধ্যে ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী এসে পৌঁছেছে এই জেলায়। শুক্রবার থেকেই শোনা যাচ্ছে, জেলা সফরে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক মহলে চলছে সেই সফরের প্রস্তুতি। পাশাপাশি খবর পাওয়া গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন ঝাড়গ্রামেও। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে, শনিবার তাই ঝাড়গ্রাম জেলার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যে মন্ত্রী। ছিলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, কারিগরি মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর, বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। মানস বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখতে এসেছি। পরিস্থিতির রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেবো। সেচ আধিকারিকদেরও সমস্যাগুলি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।’’ তবে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মুখে সাধারণ মানুষ চাইছেন স্থায়ী সমাধান। বাঁধ নির্মাণ থেকে শুরু করে বন্যা আটকাতে যা করলে স্থানী সমাধান পাওয়া সম্ভব, তা করতেই অনুরোধ করছেন প্রশাসনকে। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত হলে সেই বার্তাই তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এমনই বলছেন দুই জেলার বাসিন্দারা।