শহরে না-ফেরানোয় ক্ষোভ

পদোন্নতি সত্ত্বেও জেলা চিকিৎসক পাবে কি না প্রশ্ন

দীর্ঘদিন ধরে জেলায় কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের অসন্তোষ এই নিয়েই। তাঁদের বক্তব্য, প্রথা ভেঙে এ বার যে-দৃষ্টান্ত তৈরি করা হল, তাতে আগামী দিনে কোনও ডাক্তারই জেলায় কাজ করতে চাইবেন না।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাধারণত লোকে খুশি হয় পদোন্নতির খবরে। কিন্তু এ বার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর পদোন্নতির যে-তালিকা প্রকাশ করেছে, তাকে ঘিরে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে। ফলে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতরও।

Advertisement

সোমবার প্রকাশিত পদোন্নতির ওই তালিকায় কারও নতুন পোস্টিং বা অন্যত্র বদলির কথা বলা হয়নি। বিশেষত, জেলা থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার কোনও কথাই নেই। দীর্ঘদিন ধরে জেলায় কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের অসন্তোষ এই নিয়েই। তাঁদের বক্তব্য, প্রথা ভেঙে এ বার যে-দৃষ্টান্ত তৈরি করা হল, তাতে আগামী দিনে কোনও ডাক্তারই জেলায় কাজ করতে চাইবেন না।

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টরস’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে যোগ দিতে এমনিতেই চিকিৎসকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জেলায় আছেন, তাঁরা হতাশ। ‘‘এ বার পদোন্নতি হলেও শহরে ফেরার কোনও ব্যবস্থা না-করায় তাঁদের হতাশা বাড়বে। ভবিষ্যতে জেলায় চিকিৎসক পেতে অসুবিধা হবে,’’ বলছেন সংগঠনের ওই কর্তা।

Advertisement

এ বারের পদোন্নতি আরও গভীর অসুখের সূচনা করল বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। ‘‘ইচ্ছা না-থাকলেও পদোন্নতির জন্য অনেকে জেলায় যেতেন। তাতে

একটা ধারা তৈরি হয়েছিল। জেলায় যেতে হলেও কোনও প্রতিরোধ তৈরি হত না। কিন্তু এ বার যা হল, তাতে ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের জেলায় পাঠাতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে,’’ বলছেন প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বাম আমলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে জেলা থেকে চিকিৎসকদের কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হত। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে তিন বছর এবং বাঁকুড়া-বর্ধমান মেডিক্যালে আড়াই বছর কাজ করার পরে ইচ্ছুক চিকিৎসকেরা কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে ফিরতে পারতেন। সেই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বহুলাংশে স্বচ্ছতা বজায় থাকত। কিন্তু ২০১১ সালের পরে সেই প্রথায় ছেদ পড়ে। তার বদলে পদোন্নতির পাশাপাশি পোস্টিংয়ের মাধ্যমে বদলি নীতি চালু হয়। এ বার সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক চিকিৎসকই অসন্তুষ্ট।

ওই সব সরকারি চিকিৎসকের বক্তব্য, এত দিন জেলায় কাজ করার ক্ষেত্রে কেউ আপত্তি তুলতে পারতেন না। কারণ, একটা ভারসাম্য থাকত। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মিলিয়ে সোমবার যে-সব চিকিৎসকের (৬১৪ জন) পদোন্নতির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। ক্ষুব্ধ সরকারি চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এক দল ডাক্তার আট-ন’বছর ধরে প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করছেন। অন্য দল কলকাতায় বসে প্রোমোশন পেয়ে গেলেন!’’

স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলায় যেতে হবে বলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেননি। তাঁরা হাত কামড়াচ্ছেন!’’ পোস্টিং-বিতর্কের পাশাপাশি ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি-সহ বিভিন্ন বিভাগে সিনিয়র যোগ্য প্রার্থীদের টপকে তুলনায় জুনিয়রেরা পদোন্নতি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা সেই পদোন্নতির আদৌ যোগ্য কি না, উঠছে প্রশ্ন।

তবে এখনই হতাশা-হইচইয়ের কোনও কারণ নেই বলে আশ্বাস দিচ্ছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘পদোন্নতি যেমন হয়েছে, পোস্টিংও হবে। কিছু দিন পরেই হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement