দীপ্সিতার আপত্তি রয়েছে অনিল-কন্যা অজন্তার লেখাটি নিয়ে এবং তা তৃণমূলের মুখপত্রে প্রকাশ করা নিয়েও গ্রাফিক : সনৎ সিংহ
তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা প্রকাশ করে ঠিক করেননি অজন্তাদি। একজন গবেষক হিসেবে তাঁর মূল্যায়নও যথার্থ নয়। সাসপেন্ড হওয়া সিপিএম নেত্রী অজন্তা বিশ্বাস সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন এই প্রজন্মের বাম ছাত্রনেত্রী দীপ্সিতা ধরেরও। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভে এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা বলেন,‘‘আমিও তো পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রধানমন্ত্রীদের প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে লিখতেই পারি। কিন্তু সেখানে একটা বিশ্লেষণও থাকবে। তাঁর কাজের মূল্যায়নও থাকবে।’’ অনিল-কন্যা অজন্তার লেখাটি তৃণমূলের মুখপত্রে প্রকাশ করা নিয়েও আপত্তি রয়েছে দীপ্সিতার। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে ওই লেখা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অজন্তা বিশ্বাসের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে।’’
শনিবার ফেসবুক লাইভে আরও নানা বিষয়ের মধ্যেই উঠে আসে অজন্তার নিবন্ধ প্রসঙ্গ। দীপ্সিতা বলেন, ‘‘সবক’টা লেখাই আমি পড়েছি। অজন্তাদি বলেছেন যে এটা একটা অ্যাকাডেমিক এক্সারসাইজ। মানে তাঁর যে পড়াশোনা ও চর্চা সেই অনুযায়ী ওটা লেখা। আমরা যাঁরা গবেষণা করি তাঁদের গবেষণার মেথডোলজিতে প্রথম একটা জিনিস শেখানো হয়। তাতে যে কোনও জিনিসকে আমরা বিশ্লেষণ ছাড়া দেখি না। আমরা যখন কিছু লিখি তখন শুধুমাত্র বর্ণনা দিই না। সেখানে নিজেদের মতামত দিই। ক্রিটিক্যালি দেখার চেষ্টা করি। লেখাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল, কোথাও একটা ক্রিটিক্যাল অ্যানালিসিসের অভাব ছিল। তিনি কয়েকজন মানুষের কথা বলছেন এক, দুই, তিন, চার করে। এটা একটা ন্যারেটিভ। একজন গবেষকের যে বিশ্লেষণ থাকার দরকার ছিল তা নেই।’’
বিতর্ক শুধু লেখা নিয়েই ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা লেখার পাশাপাশি সেটি তৃণমূলের মুখপত্রে প্রকাশ নিয়েও আপত্তি তোলে সিপিএম। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে দীপ্সিতা জানান, তিনি মনে করেন অজন্তার বক্তব্যটাও গোলমেলে এবং আধারটাও গোলমেলে। দীপ্সিতার কথায়, ‘‘আমি একজন সাধারণ গবেষক হলে আমার এই স্বাধীনতা রয়েছে যে আমি যেখানে খুশি লেখাটা প্রকাশ করতে পারি। সেখানে কারও কিছু বলার নেই। কিন্তু আমি তো ব্যক্তি দীপ্সিতা ধর নই।’’ এই বিষয়েই টেনে আনেন মোদীর প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘ভারতের যে ক’জন প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় (ওবিসি) থেকে এসেছেন তাঁদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী অন্যতম। এখন আমি যদি পিছিয়ে পড়া মানুষজন যাঁরা ভারতীয় রাজনীতিতে সফল হয়েছেন তাঁদের নিয়ে লিখি তবে আমি অবশ্যই নরেন্দ্র মোদীর কথা লিখব। কিন্তু আমি মোদীকে শুধু একজন পিছিয়ে পড়া সম্প্রাদায়ের মানুষ হিসেবে ছেড়ে দেব, না কি পিছিয়ে পড়া, দলিত সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর সরকার, তাঁর দলের নীতি নিয়েও একটা দুটো কথা লিখব! সেটা আমার উপরে।’’ নিজের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমি যে হেতু একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী সে হেতু আমার রাজনৈতিক সত্তা এবং ব্যক্তি সত্তা দুটো বিপরীত হতে পারে না। তবে আলাদা হতে পারে। আমি যে ভাবে দলের মিটিংয়ে বসি আর ঘরে বসি সেটা আলাদা হতে পারে কিন্তু পরস্পরবিরোধী হতে পারে না। আমার মনে হয়েছে, ওই লেখাটা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অজন্তা বিশ্বাসের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে।’’
২৮-৩১ জুলাই তৃণমূলের মুখপত্রে চার কিস্তিতে ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয় লেখেন অধ্যাপক অজন্তা। বিষয়টি নজরে আসে আলিমুদ্দিনের। এই ঘটনা রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল। প্রয়াত পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের মেয়ের এমন কাজ মেনে নিতে পারেননি সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘‘অত্যন্ত খারাপ কাজ হয়েছে।’’ অজন্তা যে হেতু দলের সদস্য এবং দলের অধ্যাপক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাই কলকাতা জেলা কমিটি সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটিকে অজন্তার সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেয়। এরিয়া কমিটি কথা বলার পাশাপাশি শো-কজও করে তাঁকে। পরে দল ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করে অজন্তাকে। পরে এর সমালোচনায় সরব হয় তৃণমূলও। দলের মুখপত্রে অজন্তাকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে সিপিএমকে কটাক্ষ করে লেখা হয়, ‘আজব দল সিপিএম। নিজে ডুবেছে। শরিকদের ডুবিয়েছে। শূন্যে নেমেও এখনও শিক্ষা হয়নি।’
সিপিএমের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনিও যে একমত তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দীপ্সিতা। তবে তাঁর অজন্তার সঙ্গেও একবার কথা বলার ইচ্ছা আছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ নেই। এই লেখাটা পড়ার পরে আমার কথা বলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময় সুযোগ হয়নি। আমি কলকাতায় এলে অবশ্যই কথা বলার চেষ্টা করব।’’