Soumitra Khan

ফের সঙ্ঘাত? জোন পর্যবেক্ষক পদে সৌমিত্রর সব নিয়োগ আটকে দিলেন দিলীপ

জেলা সভাপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে দিলীপ এবং সৌমিত্রর দ্বন্দ্বে কিছু দিন আগেই শিরোনামে এসেছিল বিজেপি-র যুব সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:১১
Share:

সৌমিত্র খাঁ ও দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।

যুব মোর্চার পদাধিকারী বেছে নেওয়ার পথে আবার ধাক্কা খেলেন সৌমিত্র খাঁ। পাঁচটি সাংগঠনিক জোনের পর্যবেক্ষক হিসেবে যাঁদের নিয়োগ করেছিলেন যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র, আপাতত তাঁদের নামে সিলমোহর দিলেন না রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যুব সংগঠনে জোনগুলির দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন, তা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্থির করা হবে বলে দিলীপ জানিয়ে দিয়েছেন সৌমিত্রকে। তবে কলকাতা জোনের দায়িত্ব আপাতত যুব মোর্চার সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে দিয়ে দিয়েছেন দিলীপ।

Advertisement

জেলা সভাপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে দিলীপ এবং সৌমিত্রর দ্বন্দ্বে কিছু দিন আগেই শিরোনামে এসেছিল বিজেপি-র যুব সংগঠন। বেশ কয়েকটি জেলায় সৌমিত্রর নিয়োগ করা সভাপতিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করে অথবা তাঁদের মতামত কোথাও কোথাও অগ্রাহ্য করে সৌমিত্র ওই সব নিয়োগ করেছিলেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল। দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তা নিয়ে যুব মোর্চার সভাপতির টানাপড়েন তৈরি হয়। বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সৌমিত্রর তৈরি করা সব জেলা কমিটি ভেঙে দেন দিলীপ।

দলের রাজ্য সভাপতির এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে সৌমিত্র তখন জানিয়েছিলেন, তিনি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। যুব মোর্চার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে সৌমিত্র বেরিয়েও গিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সৌমিত্র আবার ফিরে যান। দিলীপের সঙ্গে তিনি যে সঙ্ঘাতে যেতে চান না, সেই বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তত ক্ষণে বিতর্ক যা তৈরি হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। দিলীপের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে সৌমিত্র যে নিজের খেয়াল খুশি মতো যুব মোর্চাকে চালাতে পারবেন না, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: যুব তৃণমূল নেতাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, উস্থিতে প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দল

পরবর্তী এক মাসের মধ্যে যুব মোর্চার জেলা কমিটিগুলি ফের গঠন করা হয়ে গিয়েছে। জেলা স্তরের পর্যবেক্ষকদের তালিকাও স্থির হয়ে গিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা এবং সমন্বয়ের ভিত্তিতেই সে সব সেরেছেন সৌমিত্র। কিন্তু তার পরেও অস্বস্তি পিছু ছাড়ল না। জোনাল পর্যবেক্ষকদের যে তালিকা সৌমিত্র তৈরি করেছিলেন, তাতে দিলীপের সিলমোহর পড়ল না।

সোমবার রাতে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে যে, সৌমিত্রর নিয়োগ করা জোনাল পর্যবেক্ষকদের আপাতত সরিয়ে দিয়েছেন দিলীপ। কী কারণে এই সিদ্ধান্ত? এ বারও কি নেতৃত্বের মতের বিরুদ্ধে গিয়েই সৌমিত্র তালিকা তৈরি করেছিলেন? বিজেপি-র অন্দরে এ নিয়ে নানা রকম জল্পনা রয়েছে। তবে রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা যুব মোর্চার দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সায়ন্তন বসু সে সব জল্পনা নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেছেন, “কোনও মতবিরোধের বিষয় নেই। আপাতত পর্যবেক্ষক নিয়োগটা স্থগিত করা হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযান করবে যুব মোর্চা। জোনাল পর্যবেক্ষক নিয়োগটা দিলীপদা তার পরেই করতে চাইছেন।”

আরও পড়ুন: অভিষেকের ‘গুন্ডা’ মন্তব্যে আইনি নোটিস দিলেন দিলীপ ঘোষ

সায়ন্তন যে তত্ত্বই খাড়া করুন না কেন, সৌমিত্রর সব পছন্দ যে সিলমোহর পাচ্ছে না, তা-ও সোমবার রাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক হিসেবে রাজু সরকারকে নিয়োগ করেছিলেন সৌমিত্র। সেই নিয়োগ স্থগিত তো হয়েছেই, কলকাতা জোনের দায়িত্ব আপাতত যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকেও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য চারটি জোনের দায়িত্ব আপাতত কাউকে দেওয়া হয়নি ঠিকই, কিন্তু কলকাতা জোনে সৌমিত্রর পছন্দের নাম বাতিল করে দিয়ে যে ভাবে শঙ্কুকে সামনে আনা হয়েছে, তাতে অন্য জোনগুলি নিয়েও সৌমিত্রকে আপাতত সমস্যায় থাকতে হবে।

বিজেপি অবশ্য কলকাতা জোনের দায়িত্ব আপাতত শঙ্কুকে দেওয়ার বিষয়ে অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ২ এবং ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় বড় কর্মসূচি পালন করবে যুব মোর্চা। ২ ডিসেম্বর উত্তর কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে এবং ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটে যুব মোর্চার ডাকে জনসভা হবে। ‘আর নয় অন্যায়’ ব্যানারে আয়োজিত সেই দুই সভাতেই প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ। খুব অল্প সময়ের নোটিসে এই দুই কর্মসূচির আয়োজন করতে হচ্ছে যুব মোর্চাকে। সভাপতি সৌমিত্র এই মুহূর্তে সেই প্রস্তুতি দেখভাল করতে পারছেন না, কারণ তিনি উত্তরকন্যা অভিযান নিয়ে ব্যস্ত। তাই সহ-সভাপতি শঙ্কুর উপরেই আপাতত কলকাতার দায়িত্ব দিতে হল বলে বিজেপি-র একাংশের দাবি। তবে বিজেপি-র অন্য একটি অংশ বলছে, শঙ্কুকে সামনে আনার কারণ শুধু এটা নয়। সৌমিত্র যাঁকে কলকাতার পর্যবেক্ষক করতে চেয়েছিলেন, সেই রাজুর উপরে যে নেতৃত্বের আস্থা নেই, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি-র ওই অংশের মত। আগের বারের মতো এ বার আর সঙ্ঘাত উত্তপ্ত চেহারা নেয়নি ঠিকই, কিন্তু জোনাল পর্যবেক্ষক পদে সৌমিত্রর পছন্দের নেতাদের বসা যে ভাবে আটকে দিলেন দিলীপ, তাতে যুব সংগঠনকে ঘিরে চলতে থাকা টানাপড়েন সংক্রান্ত জল্পনা রয়েই গেল।

আরও পড়ুন: সারদা-নারদা এবং বিজেপি নিয়ে কল্যাণের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ অপরূপা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement