বাবলাবোনার বুথ থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে লোকটি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নিজের তর্জনীর দিকে। তাতে সদ্য আঁচড় কাটা কালির ফোঁটা— ‘‘হেই বাপ, এ কেমন হল! বোতাম টিপলাম না আর ভোট হই গেল!’’
আজমল শেখ (নাম পরিবর্তিত) ঘোলা চোখে তাকিয়ে থাকেন। বুথে পা দিতেই শাসক দলের এজেন্ট তাঁকে জানিয়েছিলেন, আঙুলে কালি দিলেই ভোট দেওয়া হয়ে যায়, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র আজব কামাল! আজমলের মতো, আঙুলে কালি লেপেও ভোট দেওয়া হয়নি ডোমকলের অনেকের। সকলেরই অভিযোগ, তৃণমূলের নেতারা সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন— পুর ভোটে এটাই নাকি পদ্ধতি।
বোমা-গুলি-রক্তস্রোত দেখা ডোমকল এ বার অবাক হয়ে দেখেছে এই ‘নীরব সন্ত্রাস’। গত বিশ বছরে মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক শহরকে তাই কিঞ্চিৎ অচেনাই লেগেছে আজমল, ইসফাকদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘রক্ত ঝরে, গুলি চলে, তা বলে ভোট দিতে পারিনি এমনটা আগে কখনও হয়নি।’’ তাঁদের সেই ‘চেনা’ ডোমকলে এ বার নয়া ‘সন্ত্রাস’— ডিজিটাল ভোট!
দিনভর শহরের আনাচ কানাচে বোমা যে পড়েনি, এমন নয়, জোট সমর্থদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের গুলির লড়াইয়েরও খবর মিলেছে। পুলিশ কন্ট্রোলে খবর এসেছে বুথ জ্যাম, ভোটারদের ধমকে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার। তবে, রক্তপাত নেই, খবর নেই প্রাণহানিরও। বিরোধীদের নীরব সন্ত্রাসের অভিযোগকে তাই আমল না দিয়েই মুর্শিদাবাদের এসপি মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘গুলি-বোমার কোনও খূবর নেই। ছাপ্পা ভোট কিংবা বুধ দখলের অভিযোগও নেই। এর পরেও কী করে বলব, সন্ত্রাস হয়েছে।’’
সন্ত্রাসের ভয় অবশ্য দিন কয়েক আগে থেকেই সন্ত্রস্ত ছিলেন জোটের নেতারা। কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করে সে কথা জানিয়ে এসেছিলেন। আশ্বাস মিলেছিল, ‘নির্বিঘ্ন’ ভোটের। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলছেন, ‘‘পুলিশ থেকে প্রশাসন— সকলের কাছেই শান্তি রক্ষার আবেদন করেছিলাম। আশ্বাসও মিলেছিল। এখন বুঝছি, সবই ধাপ্পা।’’ বেলা সাড়ে বারোটায় তাই প্রার্থী প্রত্যাহার করে কংগ্রেস। স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের আনিসুর রহমান বলছেন, ‘‘ভোটারদের বলেছি, বুথে গিয়ে এই প্রহসন দেখে কী করবেন!’’
ডোমকলের অঘোষিত পুরপ্রধান, তৃণমূলের সৌমিক হোসেন বলছেন, ‘‘সারা দিনে কাউকে বলতে শুনলাম না, কোথাও গণ্ডগোল হয়েছে।’’