শুক্রবার হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় এসএসসির চেয়ারম্যানকে আদালতে তলব করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। এসএসসিকে ভর্ৎসনা করে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে সমস্ত নিয়োগ খারিজ করে দেব।”
অবশ্য এই প্রথম নয়, আগেও একাধিক বার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বলিষ্ঠ রায় দিয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন বিচারপতি মান্থা। তাঁকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কেও উত্তপ্ত হয়েছে হাই কোর্ট।
১৯৬৭ সালের ২৯ অক্টোবর বিচারপতি মান্থার জন্ম। তাঁর স্কুলজীবন এবং কলেজজীবন কেটেছে কলকাতাতেই। প়ড়াশোনা করেছেন সেন্ট পলস বোর্ডিং অ্যান্ড ডে’জ স্কুল এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে।
আইনের পাঠ নেন নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ ল থেকে। এরপর আইনের উচ্চতর পাঠ নেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে।
সাংবিধানিক এবং কর্পোরেট আইনে বিশেষ ব্যুৎপত্তি থাকা বিচারপতি মান্থা কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতা হাই কোর্টেই। ২০১৫ সাল থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসাবে কাজ করেন মান্থা।
২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে উন্নীত হন বিচারপতি মান্থা। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি।
মূলত পুলিশ সংক্রান্ত একাধিক স্বল্পমেয়াদী মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। এসএসসি দুর্নীতি মামলাতেও তাঁর রায় নিয়ে জনপরিসরে চর্চা হয়েছিল।
তবে বিচারপতি মান্থা নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে আসেন রাজনৈতিক কারণেই। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে হওয়া অন্তত ২৬টি মামলায় স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি মান্থা। একটি নির্দেশে জানান, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নতুন কোনও এফআইআর দায়ের করা যাবে না।
বিচারপতির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেনি শাসকদল তৃণমূল। তাদের তরফে দাবি করা হয়, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণেই বিরোধী দলনেতা ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠছেন।
আসানসোলে একটি কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় তৃণমূল শুধু ঘটনাস্থলে উপস্থিত শুভেন্দুকেই আক্রমণ করেনি, বিচারপতি মান্থাকেও আক্রমণ করে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেন, দুর্ঘটনার জন্য শুভেন্দুর পাশাপাশি বিচারপতি মান্থাও দায়ী।
অবশ্য বিচার বিভাগের উপর যে তিনি আস্থাশীল, তা-ও স্পষ্ট করে দেন কুণাল। তবে বিচারপতি মান্থাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি।
ওই দিন মান্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তাঁর এজলাস বয়কট করেন সরকারপন্থী আইনজীবীদের একাংশ। অন্য আইনজীবীদের তাঁর এজলাসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় ভারতের বার কাউন্সিল। তাঁরা বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের কঠোর সমালোচনা করে। বিক্ষোভ নিয়ে প্রধান বিচারপতিরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ায় আইনজীবীদের একাংশের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন মান্থা। হাই কোর্ট চত্বর এবং বিচারপতি মান্থার জোধপুর পার্কের বাসভবনের সামনে বেনামি পোস্টার পড়ে।
এই পোস্টারে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তোলা হয়। কারা এই পোস্টার দিয়েছিলেন, তা নিয়েও একপ্রস্ত রাজনৈতিক জলঘোলা হয়। বিষয়টি এখন হাই কোর্টের বিচারাধীন।