প্রজাতন্ত্র: সিএএ-এনআরসি বিরোধী অবস্থানের ঢেউ এসে পৌঁছল নদিয়াতেও। শনিবার পলাশিতে। নিজস্ব চিত্র
শাহিনবাগ, পার্ক সার্কাস, বহরমপুরের রাস্তা ধরলও পলাশিও। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্লগ্নে, শনিবার দুপুর থেকে সেখানে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্না শুরু হয়েছে। তবে অন্য সব জায়গার মতো শুধু মহিলারা নন, এখানে ধর্নায় শামিল হয়েছেন আবালবৃদ্ধবণিতা। কোনও রাজনৈতিক দলের ঝান্ডা নয়, সম্বল শুধু জাতীয় পতাকা। এ দিন এই ধর্না দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি বহরমপুরের সমীর হোসেন। বাস ছেড়ে তিনি মাঝপথে নেমে পড়েন। বেশ কিছুক্ষণ ধর্নার ভিড়ে কাটিয়ে যান তিনি। তাঁর নিজের শহরেও গত কয়েক দিন ধরে ধর্নায় বসেছেন নানা বয়সী মহিলারা। সমীর বলেন, ‘‘এখানেও এনআরসি-বিরোধী ধর্না দেখে বাসে বসে থাকতে পারলাম না। আমরা বহরমপুরে শুরু করেছি, এদের দেখেও ভাল লাগল। তাই এসে যোগ দিলাম। এ রকম প্রতিবাদ সব জায়গায় হওয়া উচিত।’’
শনিবার বিকেলে কালীগঞ্জের ব্লকের নানা এলাকা থেকে বাসিন্দারা জাতীয় পতকা নিয়ে এসে জড়ো হন পলাশির ফুলবাগান মোড়ে ধর্নামঞ্চে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ঠিক পাশে খোলা জায়গায় এক কোণে ছোট্ট মঞ্চ, চারদিক উঁচু তাঁবুর মতো করে ঘেরা। জাতীয় পতাকা ছাড়াও মনীষীদের বাণী এবং ‘নো এনআরসি, নো সিএএ, নো এনপিআর’ লেখা পতাকা দিয়ে সাজানো।
জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ধর্না শুরু করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্বপন মোদক। পরে একে একে বক্তৃতা করেন সমাজসেবী মহিউদ্দিন মান্নান, শিক্ষক আশিস দাস। তৃণমূলের ঝান্ডা ছাড়া এসেছিলেন কালীগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ বা সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্যেরা। সকলেই সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতা করে বক্তৃতা করেন।
মঞ্চে যখন বক্তৃতা চলছে, রাস্তার পাশে গাড়িতে বসে ঝরঝরিয়ে কাঁদছেন ধর্নায় যোগ দিতে আসা এক বৃদ্ধ। জানা গেল, কালীগঞ্জ ব্লকের বড় চাঁদঘর থেকে এসেছেন তিনি। নাম ওবাইদুল্লা শেখ, বয়স প্রায় আশি ছুঁই-ছুঁই। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘এ দেশে আমাদের থাকার দাবি নিয়ে মিটিং হবে শুনে জোর করে ওদের সঙ্গে চলে এসেছি। কিন্তু আমি চোখে কম দেখি, তাই নীচে নামতে পারিনি। গাড়ি থেকে শুনছি।’’ আপনি কি ভয় পাচ্ছেন? অশীতিপর ওবাইদুল্লা বলেন, ‘‘ভয় তো লাগবেই। এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে এই বয়সে কোথায় যাব?’’
দিল্লির শাহিনবাগের ধর্নায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সিএএ বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। লখনউতে শুরু হয়েছে অবস্থান প্রতিবাদ। পার্ক সার্কাসে কলকাতার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা রোজ ভিড় করছেন। দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদেও শুরু হয়েছে অবস্থান। তবে সর্বত্র যেখানে মূলত মহিলারা ধর্নার পুরোভাগে, পলাশি ব্যতিক্রম কেন? ধর্না কমিটির পক্ষ থেকে কালামউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘মহিলারা থাকছেন। প্রথম দিন পুরুষেরা একটু দলে ভারী। রবিবার থেকে আরও বেশি করে মহিলারা ধর্নায় যোগদান করবেন। আমরা চাইছি, ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে, সকলে এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হোন।’’