তুল্যানে এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ি। মঙ্গলবার দীপঙ্কর দে’র ছবি।
ভোটের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কিন্তু হুগলিতে বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলছেই। সোমবার রাতে তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের তুল্যান দুলেপাড়ায় কয়েকজন সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু’টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানো হয়েছে। সিপিএমের তরফে এই ঘটনায় পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূলের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও তৃণমূলের তরফে এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তুল্যান দুলেপাড়ায় এক দল লোক হামলা চালায়। তবে যে সব বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে সেই বাড়িগুলিতে কোনও লোকজন ছিল না। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, গত ৩০ এপ্রিল জেলায় ভোট মিটে যাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১ মে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে ওই সব বাড়ির লোকজন যাঁরা তাঁদের সমর্থক তাঁরা ঘরছাড়া। সেই সব বাড়িতেই বেছে বেছে এ দিন ভাঙচুর, লুঠপাট চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। এমনকী আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে তারকেশ্বর থানার ওসি বরুণ মিত্র বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অবশ্য হামলাকারীরা গা ঢাকা দেয়। দমকলের লোকজন গিয়ে আগুন নেভায়।
এক সময় তারকেশ্বর ছিল সিপিএমের সিপিএমের দুর্গ। কেশবচক পঞ্চায়েতে বিরোধীরা কোনওভাবেই দাঁত ফোটাতে পারত না। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই অবশ্য ছবিটা পাল্টাতে থাকে। সিপিএমের দাবি, হুমকি-মারধরেও কেশবচকে তাদের ‘ঘর ভাঙতে’ পারেনি তৃণমূল। সেই কারণেই লাগাতার আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছে তারা। এ বার গোলমালের শুরু ভোটের পরদিন থেকেই। এলাকায় ৯১ নম্বর বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হয়েছিলেন বাপ্পা দুলে। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম ছেড়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু রাজি হইনি। ভোটের দিন রাতে আমাদের পাড়ায় দু’টি বাড়িতে ওরা হামলা চালায়, ভাঙচুর করে। পর দিন আমার বাড়িতেও হামলা চালায় ও আরও কয়েকটা বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি দেয়। ওই হুমকির মুখে ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।” সোমবার রাতে ওই সব বাড়িতেই তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তারকেশ্বরে সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক মুকুল ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে ওই গ্রামের ৫৩ জন ঘরছাড়া। যাঁদের মধ্যে ১৭ জন মহিলা এবং আটটি শিশুও রয়েছে।
হামলার অভিযোগে একজন দলীয় সমর্থক গ্রেফতার হলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্তের বক্তব্য, “৩৪ বছরের শাসনে কেশবচক পঞ্চায়েত জুড়ে সিপিএম যে অত্যাচার চালিয়ছে তা মানুষ ভোলেনি। এখন সহানুভূতি পেতে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের আমাদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ভোটের পরে তুল্যান বাসস্ট্যান্ডের সামনে তাঁদের দলের ৪ জন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে সিপিএমের ছেলেরা। ওই ঘটনায় বাপ্পা দুলে-সহ সিপিএমের কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলেই ওই ঘটনা।