এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে সন্দেশখালির ঘটনায় আহতদের খোঁজ-খবর করছেন অনেকে। মঙ্গলবার দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।
লোকসভা ভোটের কিছু দিন আগে থেকেই উত্তপ্ত হচ্ছিল সন্দেশখালির বিভিন্ন গ্রাম। মঙ্গলবার বড়সড় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিজেপির ২১ জন জখম হয়েছেন। তৃণমূলের তরফেও জখম ৪। গোটা ঘটনা ঘটেছে পুলিশের সামনেই এবং তাতে জখম এক কন্সটেবলও। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
কিন্তু কেন বার বার নানা ঘটনায় উত্তপ্ত হচ্ছে এলাকা?
স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্দেশখালির এই পঞ্চায়েতগুলিতে মূল অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে ভেড়ির মাছচাষের উপরে। যাকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা চলে। যার অনেকটাই অবৈধ। ভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন, হাড়োয়ার গ্রামেও বছরভর খুন-জখম লেগে থাকে। সন্দেশখালিতে আগে সিপিএমের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় ক্ষমতা আসে তৃণমূলের হাতে। মূলত টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করেই ওই দলের অন্দরেও শুরু হয় কোন্দল। এ দিকে, সিপিএম ছেড়ে যারা তৃণমূলে এসেছিল, তাদের সঙ্গেও দলের একাংশের বনিবনা হচ্ছে না। বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সন্দেশখালির আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বরাবরই বিজেপির কিছু সাংগঠনিক প্রভাব আছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেই সংগঠন আরও মজবুত হচ্ছে ইদানীং। দেশ জোড়া বিজেপি হাওয়াম তাদের বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। তৃণমূলের একটি অংশ দল থেকে বেরিয়ে বিজেপির সঙ্গে আসতে শুরু করেছে। যা তৃণমূল নেতৃত্ব স্বভাবতই ভাল চোখে দেখছেন না। ভোটের আগে বেড়মজুর পঞ্চায়েতের পাশেই সরবেড়িয়া-আগারআটি গ্রামের ঝুপখালিতে গিয়ে আক্রান্ত হন বিজেপি নেতা তথা লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে দলের প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ওই পরিবারটিকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের লোকজনও সেখানে হাজির হয়। শমীকবাবুকে হেনস্থা করা ছাড়াও কয়েক জন আদিবাসী বিজেপি নেতাকে পরে মারধর করা হয়। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সংগঠন মজবুত হচ্ছে, এটা মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।” অন্য দিকে, তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগান জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বলে ওরা যদি ধরে নেয়, রাজ্যেও যা খুশি করবে, তা চলবে না।”