বন্‌ধে খুলল না বহু দোকান-অফিস, বাসও অমিল

বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন স্টেশনে বৃহস্পতিবার দফায় দফায় রেল অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপি ও সিপিএমের পৃথক ভাবে ডাকা বসিরহাট মহকুমায় বারো ঘণ্টার বন্‌ধে অনেক সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। কিছু জায়গায় অফিস খোলা থাকলেও হাজিরা ছিল হাতেগোনা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০২:০০
Share:

বসিরহাট স্টেশনে অবরোধ। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন নির্মল বসু।

বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন স্টেশনে বৃহস্পতিবার দফায় দফায় রেল অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপি ও সিপিএমের পৃথক ভাবে ডাকা বসিরহাট মহকুমায় বারো ঘণ্টার বন্‌ধে অনেক সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। কিছু জায়গায় অফিস খোলা থাকলেও হাজিরা ছিল হাতেগোনা। কংগ্রেস পরিচালিত বসিরহাট পুরসভায় কাউন্সিলরেরাও বেশিরভাগ অনুপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল পরিচালিত বাদুড়িয়া ও টাকি পুরসভায় কাউন্সিলরেরা এলেও কাজ প্রায় কিছুই হয়নি। বাস চলেনি মহকুমার প্রায় কোথাও। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে সন্দেশখালির যে গ্রামে বিজেপির উপরে তৃণমূলের হামলার অভিযোগে এ দিনের বন্‌ধ, সেই হালদারঘেরি পাড়ায় কিন্তু বন্‌ধের কোনও প্রভাবই পড়েনি। ঘোজাডাঙা সীমান্ত বাণিজ্যও স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায় ট্রাক, লরি যাতায়াত করেছে।

Advertisement

তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে সন্দেশখালিতে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছিল তৃণমূলের। পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির কতাবার্তাও চলছিল। অভিযোগ, সে সময়ে ৫-৬ গাড়িতে তৃণমূলের সশস্ত্র কিছু দুষ্কৃতী এসে বোমা-গুলি নিয়ে হামলা চালায়। দু’পক্ষের মারপিট বাধে। বিজেপির দাবি, তাদের ২১ জন কর্মী-সমর্থক জখম হন। এক পুলিশ কর্মীর গালে ছর্‌রা গুলি লাগে। তৃণমূল পাল্টা দাবি করে, তাদের দলেরও চার কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছেন। কয়েক জনকে পরে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার গ্রামে আসেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। পরে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, রেখা গোস্বামীরাও ঘুরে যান গ্রামে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডাকে বিজেপি। রাজ্য জুড়েও প্রতিবাদ কর্মসূচি নেয়। সিপিএমও ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে। উত্তর ২৪ পরগনা বাম নেতৃত্ব আলাদা ভাবে বন্‌ধ ডেকে বসে বসিরহাটে। তাদের যুক্তি, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সন্দেশখালির ঘটনায় তাদের দলেরও কর্মী-সমর্থকেরা জখম হয়েছেন। যদিও ঘটনার দিন এমন কোনও দাবি শোনা যায়নি দলের নেতাদের মুখ থেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য জুড়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্তে সিপিএম বিরোধী দল হিসাবেও কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তৃণমূল বিরোধী ভোটব্যাঙ্কের একাংশ যে ভাবে বিজেপির উপরে ভরসা রাখতে শুরু করেছে, তাত সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাম নেতৃত্ব। কার্যত শাসক দলের বিরোধী এই হাওয়া নিজেদের পালে টানতে মরিয়া বামেরা রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতেই বন্‌ধ ডেকে বসেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা।

Advertisement

বনগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল বিজেপির। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

বৃহস্পতিবার সিপিএম নেতৃত্বকে অবশ্য বন্‌ধে বিশেষ পথে নামতে দেখা যায়নি। খুবই ছোট কয়েকটি মিছিল চোখে পড়েছে। দলের বসিরহাটের নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “আমাদের যা করার, করেছি।” বন্‌ধ সফল ও সর্বাত্মক বলেও দাবি তাঁর। অন্য দিকে, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সন্দেশখালির গ্রামে যা হয়েছে, তা ভয়ঙ্কর ঘটনা। মানুষ আমাদের পাশে থেকে বন্‌ধ সফল করেছেন।”

এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশনে বন্‌ধ সমর্থক বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা রেল অবরোধ করে। বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে চৌমাথা, কলেজপাড়া, রেজিস্ট্রি অফিস মোড়-সহ বেশ কিছু এলাকায় জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। দোকানপাট এমনিতেই খোলেনি। নিত্যযাত্রীরাও অনেকে বেরোরনি রাস্তায়। ট্রেন চলবে মনে করে যাঁরা বেরিয়েছিলেন সকালে, তাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ হয়রান হতে হয়েছে। কিছু জায়গায় পুলিশ, র্যাফ লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয়। বেলার দিকে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। ট্রেনও চলে। বিভিন্ন জায়গায় গোলমালের অভিযোগে ৮ জন বন্‌ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। সর্বত্র পুলিশি টহল জোরদার ছিল বলে তাঁর দাবি। বাদুড়িয়া ও মিনাখাঁয় পুলিশ জোর করে বন্‌ধ ভেস্তে দেয় বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি।

এ দিকে, বারাসত মহকুমার ষণ্ডালিয়া স্টেশনেও এ দিন অবরোধ করেছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। নিত্যযাত্রীরা তার প্রতিবাদ করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, বন্‌ধ হচ্ছে বসিরহাট মহকুমায়। তা হলে বারাসতে তার প্রভাব পড়বে কেন? এলাকাটি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে বলে পাল্টা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বন্‌ধ সমর্থকেরা। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। এককাট্টা নিত্যযাত্রীদের প্রতিবাদের সামনে পিছু হঠে তারা। অবরোধ সরিয়ে নেওয়া হয়।

বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলি জানান, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে মিথ্যা কথা রটাচ্ছে বিজেপি। আদৌ ওখানে গুলি চলেনি। বিষয়টিকে নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করতে চাইছে তারা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কাল, শনিবার জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সন্দেশেখালির গ্রামে যাবে। ইদ্রিস বলেন, “বিজেপি নিজেরা কিছু করতে পারছে না বলে সিপিএমকে দোসর জুটিয়ে নোংরা খেলায় নেমেছে।”

এ দিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন থানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি দেয় বিজেপি। কিছু জায়গায় অবস্থা বিক্ষোভ, অবরোধ হয়েছে। লোকসভা ভোটের পর থেকে ক্যানিংয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে তৃণমূলের লাগাতার হামলা, সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ বিজেপির। এ দিন থানায় স্মারকলিপি দেয় তারা। এলাকায় বেড়ে চলা মদ-গাঁজা-জুয়ার আড্ডা বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বিজেপির ক্যানিং ব্লক কমিটির সদস্য কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, “যে ভাবে দিনের পর দিন শাসক দলের হাতে আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। এ সব অবিলম্বে বন্ধ না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।” হামলা-সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement