বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা আংরাইল

বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করলেন গাইঘাটার আংড়াইল-সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকার মানুষ। গত ১৫ মে রাতে আংরাইলের ঘোষপাড়ায় বাংলাদেশি সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আক্রমণে নিহত হন আরপিএফের শিয়ালদহ শাখার কনস্টেবল নির্মল ঘোষ। মূলত সেই ঘটনার প্রতিবাদেই এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ দিন আংরাইল বাজারে রাস্তায় বাঁশ ফেলে রামনগর রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০১:৩৪
Share:

বিক্ষোভে সামিল জনতা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করলেন গাইঘাটার আংড়াইল-সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকার মানুষ।

Advertisement

গত ১৫ মে রাতে আংরাইলের ঘোষপাড়ায় বাংলাদেশি সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আক্রমণে নিহত হন আরপিএফের শিয়ালদহ শাখার কনস্টেবল নির্মল ঘোষ। মূলত সেই ঘটনার প্রতিবাদেই এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ দিন আংরাইল বাজারে রাস্তায় বাঁশ ফেলে রামনগর রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্ধের দিকে প্রতিবাদ সভার আয়োজনও করেন তাঁরা। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিলেন গাইঘাটার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, বিডিও পার্থ মণ্ডল, বনগাঁর এসডিপিও মীর সাহিদুল আলি। সভা শেষে দশ দফা দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে লেখা স্মারকলিপি ওসি ও বিডিওর কাছে জমা দেওয়া হয়।

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা বনগাঁর বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ প্রায় প্রতিনিয়তই ওঠে। আংরাইল কার্যত বাংলাদেশি দুষ্কৃতী ও পাচারকারীদের ‘স্বর্গরাজ্য’। সন্ধে নামতে না নামতেই ইছামতী পেরিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে এলাকায়। মানুষ পাচার তো চলেই, গরু এবং অন্যান্য জিনিসপত্রও নিয়মিত পাচার হয় সীমান্তবর্তী এই এলাকার বিভিন্ন গ্রাম দিয়ে। কাঁটাতারের বেড়া সর্বত্র নেই। বিএসএফের টহলদারিও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। আংরাইল থেকে গাইঘাটা থানার দূরত্ব প্রায় ২৪ কিলোমিটার। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো প্রাণ হাতে বসবাস করতে হয় সাধারণ মানুষকে। এলাকার অনেকে পাচারের সঙ্গে যুক্ত, এমন অভিযোগও ওঠে। সারা বছর জুড়েই আতঙ্কের চিত্র আংরাইলে।

Advertisement

১৫ মে রাতে বাড়ি থেকে মোবাইল চুরি গিয়েছিল আরপিএফ কর্মী নির্মলবাবুর। বাংলাদেশি দুষ্কৃতী এবং পাচারকারীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে শোরগোল ফেলেন তিনি। পর দিন রাতে তাঁর দাদা পরাণবাবু দেখেন, বাড়ির কাছেই কয়েকটি অচেনা মুখ ঘোরাফেরা করছে। তাঁর হাঁকডাকে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ধরে ফেলে এক জনকে। এদের সঙ্গীসাথীরাই মোবাইল চুরি করেছে বলে অভিযোগ ছিল ঘোষ পরিবারের। এ দিকে, তাদের সাগরেদকে গ্রামবাসীরা আটকে রেখেছে, এই খবর পেয়ে প্রায় শ’খানেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে এ পারে। পরাণবাবুকে মারধর করে তারা। দাদাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন নির্মল। কিছু ক্ষণ বাদে গ্রামের মধ্যেই একটি নালায় তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মাথায় ধারাল অস্ত্রের কোপানোর দাগ ছিল। বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। পরাণবাবুর মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই পড়ে।

১৬ তারিখ, ভোটের দিন এলাকায় পথ অবরোধ করেন বাসিন্দারা। বুধবার প্রতিবাদ সভারও আয়োজন করা হয়। সেখানে নির্মলবাবুর ছবি দিয়ে পোস্টার ছিল। সকাল থেকে শুরু হয় অবরোধ। আংরাইল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম মণ্ডল বলেন, “দশ দফা দাবিতে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। এ সব দাবি মানা না হলে আমরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ, অবরোধ করবো।”

এলাকার মানুষের দাবি, সীমান্ত দিয়ে পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। বিএসএফ জওয়ানদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং তাঁদের আরও সক্রিয় করতে হবে।

নির্মলবাবুর খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তিরও দাবি এ দিন জোরাল ভাবে তোলেন আংরাইল, বর্ণবেড়িয়া, গদাধরপুরের কয়েক হাজার মানুষ।

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, “আমি নিজে এই এলাকা দিয়ে সন্ধেবেলা যাতায়াত করলে বিএসএফ জওয়ানেরা কত বার জিজ্ঞাসাবাদ করে।

অথচ, সন্ধের পর থেকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঢুকে যখন এলাকায় দাপাদাপি করে, তখন কিছু ব্যবস্থা নেয় না তারা।” এলাকায় অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধের দাবি করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে পাচারের কাজে গ্রামের যে সব লোক দালালিতে জড়িয়ে পড়ে, তাদের চিহ্নিত করার উপরেও জোর দেন ধ্যানেশবাবু।

বিজেপির গোপালনগর ব্লক সভাপতি রামপদ দাসের বক্তব্য, “প্রশাসন যদি কড়া হয়, তা হলে কোনও কাঁটাতারের বেড়া দরকারই হয় না।” বিজেপি নেতৃত্বের মতে, প্রশাসনের উপরে রাজনৈতিক দলের একাংশের চাপ থাকে। সে জন্যই সক্রিয় হতে পারে না তারা। অবাধে পাচার এবং তার হাত ধরে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি চলে সীমান্তের গ্রামে গ্রামে। ক’দিন আগে গাইঘাটাতেই বাংলাদেশি দুই বোনকে এনে ধর্ষণ করে পালায় কয়েক জন বাংলাদেশি দুষ্কৃতী। এমন নানা ঘটনা লেগেই আছে এলাকায়।

গরু পাচারের জন্য চাষেরও প্রচুর ক্ষতি হয় বলে জানালেন গ্রামের মানুষ। কিন্তু বিএসএফ, পুলিশ, প্রশাসন কেউই সে সব রুখতে পাকাপাকি কোনও পদক্ষেপ করে না বলে তাঁদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। গাইঘাটার ওসি অবশ্য এ দিন যথেষ্ট আশার কথা শুনিয়েছেন। প্রতিবাদ সভায় বহু মানুষের সামনেই তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ যদি শান্তিতে, নিরাপদে বসবাস করতে না পারেন, তবে সেটা বিএসএফ এবং পুলিশের ব্যর্থতা। আমরা যদি সেই কাজ করতে না পারি, তবে ক’দিন বাদে এখানে আপনাদের সঙ্গে এক সঙ্গে বসে আমিও প্রতিবাদে সামিল হবো।” অরিন্দমবাবু আরও বলেন, “যদি বিএসএফ সীমান্তে পাহারা দিতে না পারে, তবে আমি দু’জন কনস্টেবলকে নিয়ে পাহারা দিতে আসবো।” বিডিও পার্থবাবুর বক্তব্য, “বিএসএফ এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

এ দিন বিএসএফের কেউ ছিল না সভায়। জনতার একাংশের বক্তব্য, “পুলিশ-প্রশাসনকে আরও কড়া হতেই হবে। সেই সঙ্গে পাচারের সমস্যা এবং সীমান্তের গ্রামে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব রুখতে দু’দেশেরও আলোচনায় বসা দরকার। সীমান্তের সব জায়গায় কাঁটাতার বসানো উচিত। অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement