ব্যাহত বিএসএনএল পরিষেবা, নাকাল গ্রাহকেরা

পেনশনের টাকা তুলবেন বলে সকালে ভাঙড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন বছর সত্তরের নজরুল মোল্লা। লাইন ঠেলে যখন কাউন্টার অবধি পৌঁছতে পারলেন, তখনই কম্পিউটারের সংযোগ কেটে গেল। কাউন্টার থেকে বলা হল, সংযোগ না আসা পর্যন্ত কিছুই করার নেই। অগত্যা অপেক্ষা করতে হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং ও ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

পেনশনের টাকা তুলবেন বলে সকালে ভাঙড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন বছর সত্তরের নজরুল মোল্লা। লাইন ঠেলে যখন কাউন্টার অবধি পৌঁছতে পারলেন, তখনই কম্পিউটারের সংযোগ কেটে গেল। কাউন্টার থেকে বলা হল, সংযোগ না আসা পর্যন্ত কিছুই করার নেই। অগত্যা অপেক্ষা করতে হল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেও যখন সংযোগ এলো না, তখন ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না নজরুল মোল্লার। ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনোর মুখে ক্ষোভের সঙ্গেই বললেন, “পুরো দিনটাই নষ্ট হল। নষ্ট হল রিকশা ভাড়াও।”

Advertisement

শুধু নজরুল মোল্লাই নন, তাঁর মতো বহু মানুষকেই সমস্যায় ফেলেছে বিএসএনএল ফোন ও ব্রড ব্যান্ডের ব্যাহত পরিষেবা। বিএসএনএলের ফোন ও ব্রড ব্যান্ডের সমস্যার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে জানালেন ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি দফতরের কর্মীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই এই সমস্যা চলছে। শুধু ভাঙড় নয়, ক্যানিংয়ের জীবনতলা, বাসন্তী, গোসাবা-সহ বহু জায়গাতেই ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় নাকাল হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী থেকে অফিস কর্মী সকলকেই। ক্যানিংয়ে একটি সরকারি দফতরের এক কর্মী ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, “বিএসএনএলের কারণে কম্পিউটার পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ লোকজন এসে আমাদের উপরে তোপ দাগছেন। তাঁরা বুঝতেই চাইছেন না, এতে আমাদের কিছু করার নেই।”

বিএসএনএল গ্রাহকদের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়েই ফোনে ডায়াল টোন থাকছে না। টেলিফোন বা ইন্টারনেটের সংযোগ চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনের লাইন দীর্ঘদিন খারাপ থাকলেও সারানোর জন্য বহু বার আবেদন করতে হচ্ছে। চেয়েও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের খুঁচিতলা ও মঠেরদিঘি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ চেয়েও তা না পাওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠাতে পারছেন না কর্মীরা। ক্যানিংয়ের একটি টেলিফোন বুথের মালিকের কথায়, “বিএসএনএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বুথ করেছিলাম। অধিকাংশ সময়েই ফোনে কিছু শোনা যায় না। খুব খারাপ শব্দ হয়। প্রায়ই ফোনের লাইন খারাপ থাকে। ফোন করতে এসে অনেকে এ জন্য কথা শোনাতেন। বাধ্য হয়ে অন্য কোম্পানির সংযোগ নিতে হয়েছে।”

শুধু ক্যানিং মহকুমাই নয়, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত জেলার ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমাতেও বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড পরিষেবার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। এর ফলে সমস্যায় পড়েন ইন্টারনেট গ্রাহকেরা। তবে ব্যাঙ্কগুলিতে তার তেমন প্রভাব পড়েনি।

ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “অফিসে বিএসএনএলের ফোন ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকলেও মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য ব্লক অফিস থেকে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনই আমাদেরও জেলা অফিসে রিপোর্ট পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

বিএসএনএলের ক্যানিং মহকুমার সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সুশান্ত গুপ্ত বলেন, “অনেক জায়গায় রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেটে দেওয়া হয়েছে। তাই বহু ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা নজর রাখছি। পরিষেবার কী ভাবে উন্নতি করা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement