ফি-বর্ষায় প্লাবন, ফের নদী সংস্কারের আশ্বাস সব প্রার্থীরই

ফি-বর্ষায় প্লাবন। আর প্রতি ভোটে প্লাবন থামানোর আশ্বাস। এটাই যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে বনগাঁয়। নদী, খাল, বিল, বাওড়ে ঘেরা এই মহকুমা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের অভাবে ইছামতী, যমুনা, কোদালিয়া, কপোতাক্ষর মতো ছোটবড় নদী মজে গিয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। কচুরিপানায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে স্রোত। তাই অল্প বৃষ্টিতেই প্রতি বছর মহকুমার নানা এলাকা প্লাবিত হয়। নষ্ট হয় চাষ। সমস্যাটা দীর্ঘ কয়েক দশকের।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৩
Share:

মহকুমার নিকাশি ব্যবস্থা যে নদীগুলির উপরে নির্ভর করে সেই ইছামতী, কোদালিয়া ও নাওভাঙার এখনকার অবস্থা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ফি-বর্ষায় প্লাবন। আর প্রতি ভোটে প্লাবন থামানোর আশ্বাস।

Advertisement

এটাই যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে বনগাঁয়। নদী, খাল, বিল, বাওড়ে ঘেরা এই মহকুমা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের অভাবে ইছামতী, যমুনা, কোদালিয়া, কপোতাক্ষর মতো ছোটবড় নদী মজে গিয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। কচুরিপানায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে স্রোত। তাই অল্প বৃষ্টিতেই প্রতি বছর মহকুমার নানা এলাকা প্লাবিত হয়। নষ্ট হয় চাষ। সমস্যাটা দীর্ঘ কয়েক দশকের। সমাধানের উদ্যোগ মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীদের চোখে পড়ে বটে, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই নদী, খাল, বিলের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ কম নয়। বিধানসভা ভোট হোক বা লোকসভা— প্রতি বারই প্রার্থীদের সামনে এই প্রশ্ন তোলেন গ্রামবাসীরা। এ বারও সেই একই বিষয়ে সব প্রার্থীরই এক রা— ‘জিতলে সমস্যার সুরাহা হবে’।

অন্যান্য নদী বা বাওড়ের চেয়ে বনগাঁয় ইছামতী সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ২০০৫ সালে গাইঘাটার কালাঞ্চি সেতু থেকে তেঁতুলিয়া, পরে বর্ণবেড়িয়া থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ইছামতীর পলি তুলে সংস্কার হয়। এখন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চলছে কালাঞ্চি থেকে টিপি পর্যন্ত নদীপথে সংস্কারের কাজ। কিন্তু তাতে নদীপাড়ের বাসিন্দারা সন্তুষ্ট নন। তাঁদের অভিজ্ঞতা, পলি তোলার পরে নদীর গভীরতা বাড়ে। কিছু দিন সুফল মেলে। কিন্তু ফের পলি জমে গভীরতা কমতে থাকে। তা ছাড়া, নদীপাড়ে তুলে রাখা পলি অনেক সময়েই বৃষ্টিতে ধুয়ে ফের নদীতে গিয়ে মেশে। নদীর উৎসমুখ সংস্কার ছাড়া প্রকৃত সুফল মিলবে না বলেই তাঁরা মনে করেন। একই অভিমত ‘পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি’র সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায়েরও।

Advertisement

স্রোতহীন, নাব্যতা হারানো নাওভাঙা নদী নিয়ে বর্ষায় আতঙ্কে থাকেন বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়ার বাসিন্দারা। ফি-বছর বর্ষায় নদীর জল উপচে ঢুকে পড়ে কৃষিজমিতে। জল নামতে কেটে যায় প্রায় দু’মাস। চাষিদের বক্তব্য, নাওভাঙার নাব্যতা কমে যাওয়ায় জমা জল বের হতে পারে না। নদীর সংস্কার ছাড়া বাঁচার উপায় নেই।

বাগদা ব্লকের অন্যতম প্রধান নদী কোদালিয়া বা কোদলা। এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। নদী থেকে পাম্পের সাহায্যে চাষিরা জল নিয়ে জমিতে চাষ করেন। কিন্তু গরমে নদী শুকিয়ে যায়। নদীখাতে গজিয়ে ওঠে আগাছা। ফলে, প্রতি বছরই বিপাকে পড়েন চাষিরা। ওই ব্লকেরই বেত্রাবতী, বেতনা বা কপোতাক্ষ নদীও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মৃতপ্রায়।

গাইঘাটা ছুঁয়ে বয়ে চলা যমুনা নদী দিয়ে এক সময়ে বড় বড় নৌকা চলত। কিন্তু বর্তমানে যমুনাও নাব্যতা হারানোয় বর্ষায় নদীর জল ঢুকে গাইঘাটা ব্লক এবং গোবরডাঙা পুর এলাকার বেশ কিছু জায়গা প্লাবিত করে। মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়।

এই সব সমস্যা যে রাজনৈতিক দলগুলি জানে না এমন নয়। দিন কয়েক আগেই প্রচারে বেরিয়ে বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে ইছামতীতে নেমে কচুরিপানা সরাতে দেখা গিয়েছে। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তিনি বলছেন, “কেন্দ্রে আমরা ক্ষমতায় এলে ইছামতী-সহ এখানকার সব নদী-বাওড় পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের চেষ্টা করব।” সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাসও বলছেন, “জিতলে আমার প্রথম কাজই হবে এখানকার নদী-খাল-বিল সংস্কার।” একই সুর কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডল বা তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের গলায়।

বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ তৃণমূলেরই গোবিন্দচন্দ্র নস্কর। নদী সংস্কারের জন্য তিনি কী করেছেন? গোবিন্দবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তৃণমূল সূত্রের দাবি, সাংসদ থাকাকালীন গোবিন্দবাবু ইছামতী সংস্কারের জন্য বহুবার কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সেই দাবি মতোই গাইঘাটার বর্ণবেড়িয়া থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত নদী সংস্কারের কাজ হয়। তার জন্যই এখন নদীর স্রোত বেড়েছে।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, মহকুমার অন্য নদী সংস্কারের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এর জন্য কেন্দ্রের সহায়তা দরকার। তা ছাড়া, কোনও কোনও নদীর সঙ্গে বাংলাদেশেরও সংযোগ রয়েছে। কাছেই সমস্যা খুব সহজে মেটার নয়। বিস্তর আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে।

বিশ্বজিৎবাবুর এই দাবি সিপিএম মানেনি। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের বনগাঁ-বাগদা জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “মহকুমার নদী-বিল-বাওড় সংস্কারে রাজ্যের শাসক দল তেমন উদো্যাগী হয়নি। সাংসদের ভূমিকাও দেখা যায়নি।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, “আমাদের আমলে, ২০০৫ সালে কালাঞ্চি থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার ইছামতী সংস্কার করা হয়েছিল। এ বারও আমরা জিতলে নদী সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”

ভুক্তভোগীরা অবশ্য বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement