প্রচারের আগে পার্টি অফিসে বাবার ছবিকে প্রণাম অর্ণব রায়ের।—নিজস্ব চিত্র।
ঘড়িতে সকাল সওয়া ৮টা। পাজামা-পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়ে বেরোনোর মুখে স্ত্রী এগিয়ে দিলেন কমপ্লানের গ্লাস। সঙ্গে দু’টো হরলিকস বিস্কুট। প্রচণ্ড গরমের জন্য সকালে প্রচারে বেরোনোর আগে এটাই রোজকার রুটিন। ঢক ঢক করে গ্লাসটা শেষ করে বিস্কুট দু’টো চিবোতে চিবোতেই ছুট লাগালেন পার্টি অফিসের দিকে। কারণ,আগে থেকেই সেখানে পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে হাজির দলীয় নেতা-কর্মীরা। আসার কথা প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের।
সকাল আটটাতেই ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের ভিড় দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায়। দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে বাবার ছবিতে মালা দিয়ে সেরে নিলেন প্রণাম। ততক্ষণে ভিড় আরও বেড়েছে। কার্যালয়ের বাইরে এসে তা দেখে উজ্জীবিত প্রার্থী বলে উঠলেন, “যে যতই রাজ্যে কংগ্রেসকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করুন না, কংগ্রেস তার নিজের জায়গায় স্বমহিমাতেই রয়েছে।” বক্তব্য শেষ হতেই কলরোল উঠল ভিড়ের মধ্যে। আশপাশের এলাকা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা কে কেমন আছেন জেনে নেওয়ার মাঝেই পৌঁছে গেলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।
ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁয়েছে। মাথার উপরে রোদ বেশ চনচনে। তবে উৎসাহে কোনও খামতি নেই। শুরু হয়ে গেল মিছিল। কয়েক হাজার মাথার মিছিল এগিয়ে চলল ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে মিছিল ঘুরল ক্যানিং বাজারের দিকে। প্রার্থীকে দেখতে রাস্তার পাশে দোকান, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন লোকজন। তাঁদের দিকে হাত তুলে নমস্কার জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই এল প্রতি নমস্কার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ লম্বা হচ্ছে মিছিল। বিশাল মিছিল দেখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের মন্তব্য, “মিছিলের যা বহর, তাতে চারমুখী লড়াইয়ে উনি কতটা সুবিধা করতে পারবেন জানি না?” কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে ভেসে এল পাল্টা মন্তব্য, “উনি লড়াই করার ক্ষমতা রাখেন। অর্ণবদা তো সিপিএম এবং তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে ২৫ বছর ধরে দিঘিরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছেন। এত সহজে উনি হারার লোক নন।” ইতিমধ্যে বাজার ছাড়িয়ে ৭ নম্বর দিঘির পাড়ে পৌঁছে গিয়েছে মিছিল। ক্রমশ গোলকুটিপাড়া, হাইস্কুলপাড়া হয়ে জয়দেবপল্লিতে মিছিল ঢুকতেই রাস্তার ধারের ভিড় থেকে বেরিয়ে এলেন এক বিধবা। প্রার্থীর হাত ধরে তাঁর আবেদন, “বাবা, ওরা আমাকে কোনও সরকারি সাহায্য দেয়নি। এমনকী বিধবাভাতাও জোটেনি। আমার আশীর্বাদ রইল। জিতে আমাদের মতো গরিবগুর্বো মানুষগুলোকে একটু দেখো।” বিধবাকে আশ্বাস দিয়ে ফের কর্মীদের নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন কংগ্রেস প্রার্থী।
ঘড়ির কাঁটা ১২টা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষ হল প্রচার। কেমন বুঝলেন? প্রশ্ন শুনে না থেমেই উত্তর কংগ্রেস প্রার্থীর, “দেখলেন তো! আসলে সিপিএম, তৃণমূল কেউ যে কিছু করবে না তা বুঝে গিয়েছেন মানুষ। তাই জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। মানুষের ভাল সাড়াও পাচ্ছি।” কথা শেষ করে এগিয়ে গেলেন দলীয় অফিসের দিকে।