পুণ্যার্থীদের ভিড় নিমেষে ঘুরে গেল ‘সুধা’র দিকে

কিছু ক্ষণ আগেই বহু কালের পুরনো চেনা দোকান থেকে শ’পাঁচেক টাকা দিয়ে পুজোর ডালি কিনেছেন। পিতলের ছোট কলসিতে দুধের জোগাড় ছিল আগে থেকেই। এ বার পুজোর উপচার নিয়ে ভিড় ঠেলে চললেন শিবের মাথায় জল-দুধ ঢালতে। পরনে লাল চওড়া পাড় গরদের শাড়ি। দু’চোখে টলমল করছে ভক্তি-অশ্রু।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৫০
Share:

তারকা প্রার্থীকে নিয়ে হিমসিম পুলিশও। ছবি: মোহন দাস।

কিছু ক্ষণ আগেই বহু কালের পুরনো চেনা দোকান থেকে শ’পাঁচেক টাকা দিয়ে পুজোর ডালি কিনেছেন। পিতলের ছোট কলসিতে দুধের জোগাড় ছিল আগে থেকেই। এ বার পুজোর উপচার নিয়ে ভিড় ঠেলে চললেন শিবের মাথায় জল-দুধ ঢালতে। পরনে লাল চওড়া পাড় গরদের শাড়ি। দু’চোখে টলমল করছে ভক্তি-অশ্রু।

Advertisement

টাইম মেশিনে সময় পিছিয়ে গিয়েছে ৩৭ বছর আগে। ১৯৭৭ সালে বাবা তারকনাথ ছবির শ্যুটিংয়ের কথা মনে করতে পারছেন বয়স্ক মানুষজন। সে বারও মন্দির চত্বরে তাঁকে ঘিরে ভিড় ছিল প্রবল। তখন অভিনয় জীবনের তুঙ্গে সন্ধ্যা রায়। এ বার অবশ্য অভিনেত্রীর ভূমিকা ছেড়ে অন্য রূপে। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী তিনি। সোমবার নিজের নামে তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের ৪২ জন সাংসদ পদপ্রার্থীর নামেই তারকেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিয়ে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বেচারাম মান্না, আরামবাগে দলের প্রার্থী আফরিন আলি প্রমুখ।

একে চৈত্র মাস, তার উপরে শুক্লপক্ষ। সর্বোপরি সোমবার— সব মিলিয়ে মাহেন্দ্রক্ষণ বলাই চলে। প্রতি বারই এই দিনে তারকেশ্বর মন্দিরে ভিড় উপচে পড়ে। এ দিনও সেই চেনা দৃশ্যটা ছিল। সেই সঙ্গে অভিনেত্রী প্রার্থীর আগমন পুণ্যার্থীদের কাছে বাড়তি পাওনা হিসাবে থেকে গেল। বর্ধমান থেকে পুজো দিতে এসেছিলেন অনুপ সামন্ত। উচ্ছ্বসিত অনুপবাবুর কথায়, সন্ধ্যা রায় আমার এক জন প্রিয় অভিনেত্রী। আজ পুজো দিতে এসে ওঁকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাব ভাবতেই পারিনি। দিনটা ভাল। মনে হচ্ছে, আজ যে মনস্কামনা নিয়ে পুজো দিতে এসেছি, সেটা পূরণ হবেই হবে।”

Advertisement

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ সন্ধ্যা রায় পৌঁছে যান তারকেশ্বর শিব মন্দির চত্বরে। তাঁকে দেখা মাত্র ভিড়টা হইহই করে ওঠে। সকলের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে হাত নাড়েন সন্ধ্যাদেবী। মন্দির চত্বরেই দুধ পুকুর। সেই জল কলসে ভরে মাথায় নেন তিনি। এরপরে পুজোর সামগ্রী এবং দুধ নিয়ে এগোন মূল মন্দিরের দিকে। ভিড় সামলাতে তখন হিমসিম দশা পুলিশের।

একে ভোর থেকে জলটুকুও ছোঁননি। তার উপরে রোদে-গরমে-দমবন্ধ ভিড়ে কিছুটা কাহিল হয়ে পড়েন প্রার্থী। মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে একটি দোকানে মিনিট পনেরো বসে থাকেন। তারপর বিশ্রাম নিতে যান কাছেই সরকারি ট্যুরিস্ট লজে। তারই ফাঁকে লজ-সংলগ্ন পাড়মহল মাঠে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথাবার্তা সেরে নেন সন্ধ্যাদেবী। জানান, মানুষের সেবা করাটাই তাঁর কাছে আসল রাজনীতি। বললেন, “আমি অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের কাছে পরিচিত। সমাজসেবা করার ইচ্ছা ছিল বহু দিনের। রাজনীতিতে এসে বৃহৎ পরিসরে সেই ইচ্ছা পূরণের সুযোগ এল। মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই সুযোগ করে দিলেন।” ভোটে জিতলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলেও জানালেন।

তাঁর নিজের কেন্দ্র মেদিনীপুরের মানুষের জন্য কোনও বিশেষ বার্তা?

ষাটের দশক থেকে শুরু অভিনয়ের ক্যারিয়ার সামলানো সন্ধ্যাদেবী জানালেন, রুপোলি পর্দায় তাঁকে চেনেন রাজ্যের সব প্রান্তের মানুষ। কিন্তু যাত্রা জগতে এসে তিনি নিজে সরাসরি পৌঁছতে পেরেছেন মানুষের কাছাকাছি। মেদিনীপুরেও গিয়েছেন বহু বার। ইভিএম মেশিনেও সেখানকার মানুষের ভালবাসার ছোঁয়া থাকবেন বলে আশা অভিনেত্রীর। কিন্তু সাংসদ হলে নিজের অভিনয় জীবনের কী হবে?

সন্ধ্যাদেবী বলেন, “এখন অনেক নতুন ছেলেমেয়ে এসেছে অভিনয়ে। ওই জগতের সঙ্গে তাল রাখা এখন সত্যি কঠিন। কিন্তু শিল্পীদের তো অবসর হয় না। উপযুক্ত চরিত্র পেলে অভিনয় অবশ্যই চালিয়ে যাব।”

রাজনীতির জগতে সদ্য পা রাখা অভিনেত্রী যে দক্ষতায় সামলালেন সাংবাদিকদের প্রশ্নবান, তাতে আপ্লুত পার্থবাবু। বললেন, “দলের পুরনো নেত্রীর মতো কথা বলেছেন উনি। এর উপরে আর কিছু বলার নেই আমার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement