থমকে যাওয়া নির্মাণের ক্ষতে জীবনযন্ত্রণা হাওড়ায়

রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেছেন, জমি-জটের কারণে বারাসত ও ব্যারাকপুরে মেট্রো রেল হবে না। অনিশ্চিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভবিষ্যৎও। একই মত রেল মন্ত্রকের। তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ভোটের জন্যই এ সব কথা বলেছেন অধীরবাবু। কিন্তু যে সমস্ত প্রকল্প এক সময়ে আশার আলো জ্বেলেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে, তাঁরা কী বলছেন? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা।বছরখানেক আগেই থেমে গিয়েছে যন্ত্রের শব্দ, কর্মীদের তৎপরতা। তার সঙ্গেই থেমে গিয়েছে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজও। কলকাতার দোসর এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে শুধু রয়ে গিয়েছে নির্মাণের ক্ষত। আর সেই ক্ষত বাড়িয়ে তুলেছে হাওড়াবাসীর দিনযাপনের যন্ত্রণাও। এক সময় এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাত ধরেই কলকাতা কিংবা আরও দূরের সল্টলেকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের স্বপ্ন দেখেছিলেন হাওড়ার বাসিন্দারা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০২
Share:

মেট্রোর কাজের জেরে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য এমনই হাল জি টি রোডের।

বছরখানেক আগেই থেমে গিয়েছে যন্ত্রের শব্দ, কর্মীদের তৎপরতা। তার সঙ্গেই থেমে গিয়েছে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজও। কলকাতার দোসর এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে শুধু রয়ে গিয়েছে নির্মাণের ক্ষত। আর সেই ক্ষত বাড়িয়ে তুলেছে হাওড়াবাসীর দিনযাপনের যন্ত্রণাও।

Advertisement

এক সময় এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাত ধরেই কলকাতা কিংবা আরও দূরের সল্টলেকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের স্বপ্ন দেখেছিলেন হাওড়ার বাসিন্দারা। ২০১০ সালে হাওড়ার দিকে প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। প্রথম দফায় কাজ শুরু হয় প্রস্তাবিত প্রকল্পের শেষ স্টেশন হাওড়ার বঙ্গবাসী মোড় থেকে জেলা গ্রন্থাগার পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তায়। মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ করার জন্য হাওড়ার ময়দান মার্কেট ভেঙে দেওয়া হয়। দোকানদারদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় হাওড়ার মহাত্মা গাঁধী রোডে। দোকানদারদের অনেকেই বলছেন, শহরের উন্নয়নের স্বার্থে পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় সরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখন যদি প্রকল্পটাই না হয়, তা হলে এই উচ্ছেদের অর্থ কী, সেই প্রশ্নও কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে উঠতে শুরু করেছে।

মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছিল। গঙ্গার নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে কলকাতায় পৌঁছনোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। ঠিক ছিল, হাওড়া স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে এই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হবে। সেই কাজ করার জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়ার বিশেষ যন্ত্র (টানেল বোরিং মেশিন), বিরাট মাপের ক্রেনও নিয়ে আসা হয় হাওড়াতে। কিন্তু হঠাৎই থমকে গিয়েছে গঙ্গার নীচের সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা। তাই বন্ধ কাজ-ও। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, বৌবাজারে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা। ফলে কাজ এগোনো যাচ্ছে না। অর্থাৎ গঙ্গার এ পাড়ে (কলকাতা) জমি জটে থমকে গিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ।

Advertisement

টিনের পাত দিয়ে ঘেরা হাওড়া ময়দান চত্বরে এ ভাবেই নিত্য যাতায়াত।

আর এই নানা জটেই বিদ্ধ হাওড়াবাসীর দৈনিক জীবন। মেট্রোর কাজের জন্য বঙ্গবাসী মোড় থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত জি টি রোডের প্রায় পুরোটাই টিন দিয়ে ঘেরা। ফাঁক-ফোকর দিয়ে যেটুকু রাস্তা রয়েছে, তা-ও খানাখন্দে ভরা। তার ফলে এলাকাবাসীর চলাফেরাই দায় হয়ে উঠেছে।

এলাকার এক বাসিন্দা রাজিন্দর সিংহ বলেন, “হাওড়া ময়দান চত্বর যেন চাষের খেত হয়ে গিয়েছে!” রাস্তা সারানোর জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিছু জায়গায় সিমেন্টের তাপ্পি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কিছু দিনের মধ্যেই উঠে যায়। কিছু কিছু এলাকায় লোহার খাঁচার উপর লোহার পাত বসিয়ে অস্থায়ী রাস্তাও করা হয়েছিল। ভাঙাচোরা কিংবা ওই অস্থায়ী রাস্তা দিয়েই হেঁটে, রিক্সায় কিংবা গাড়িতে চেপে যাতায়াত চলছে। নিত্যদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে, জানালেন বাসিন্দারা।

মেট্রোর কাজ থমকে যাওয়ায় হাওড়ার জিটি রোডের দু’ধারের দোকান ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও। জিটি রোডের দু’ধার দিয়ে প্রচুর জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বেশ বড় মাপের শো-রুমও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেট্রোর কাজ হলেও জিটি রোডের ক্ষতি হবে না বলে জানানো হয়েছিল। “কিন্তু কাজ শুরু হতেই দেখলাম, রাস্তার দফারফা হয়ে গেল।”মন্তব্য এক ব্যবসায়ীর। জি টি রোড টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া কিংবা রাস্তার বেহাল দশার ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে বলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।

রেল কর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, হাওড়ায় কাজ করতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এ-পারেই কাজ না এগোয়, তা হলে হাওড়ায় অকারণে খোঁড়াখুঁড়ি করে লাভ কী হবে! আপাতত এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি আশার আলোও দেখাতে পারছেন না তাঁরা। হাওড়ার এক বাসিন্দা সময় সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের আর পাতাল প্রবেশের দরকার নেই। মাটির উপরে যাতে নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারি, সেটা দেখলেই হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement