হেলিকপ্টার থেকে নেমে মঞ্চের দিকে আসছেন মমতা। বক্তৃতা করছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। শুক্রবার তারকেশ্বর ও উলুবেড়িয়া তোলা নিজস্ব চিত্র।
সিঙ্গুরের আবেগকে ভোটের প্রচারে তারকেশ্বরে টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের সমর্থনে শুক্রবার তারকেশ্বরের বৈদ্যপুর হাসপাতালের অদূরে সভা করেন দলনেত্রী। প্রার্থী এবং দলের অন্য নেতানেত্রীরা ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন সিঙ্গুরে নিহত কিশোরী তাপসী মালিকের বাবা-মা। ছিলেন সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সময় ‘শহিদ’ রাজকুমার ভুলের মা। বক্তৃতার শুরুতেই মমতা বলেন, “যখন তাপসী মালিককে ওরা ধর্ষণ করে খুন করেছিল, ওর বাবার উপরেই দায় চাপাতে চেয়েছিল সিপিএম। ওরা এতটাই নোংরা।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যার কথায় ওরা এমনটা করেছিল, তাদের ওরাই বলত দলের সম্পদ।” নেত্রী নাম না করলেও সিঙ্গুরের সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্তের দিকেই সমালোচনার তির ছিল তাঁর। সিঙ্গুর জোনাল কমিটির তৎকালীন সম্পাদক সুহৃদ দত্ত তাপসী মালিককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন। তিনি জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু তাঁকে ‘দলের সম্পদ’ বলেছিলেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনাও হয়েছিল বিস্তর। এ দিন বাম সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ ফের করেছেন মমতা। সিঙ্গুর হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। আরামবাগ কেন্দ্রের অন্তর্গত তারকেশ্বরে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ টেনে এনে হুগলি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগকে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানান দলনেত্রী।
এ দিন জগৎবল্লভপুরের বড়গেছিয়া হাসপাতাল মাঠে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে আয়োজিত জনসভাতেও ভাষণ দেন তৃণমূল নেত্রী। প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ হাজির ছিলেন। মমতা বলেন, “নির্বাচন আসতেই কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম এক হয়ে গিয়েছে। আসলে ওরা এক ডালে বসেছে। আমার নামে কুৎসা, অপপ্রচার করছে।”
উলুবেড়িয়ার তুলসীবেড়িয়া মোড়ে দলের প্রার্থী সুলতান আহমেদের সমর্থনেও এ দিন সভায় আসেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে হয় কংগ্রেস না হলে বিজেপি এদের কোনও একটি দলই যাতে ক্ষমতায় আসে, সে জন্য দু’টি দল গোপন চুক্তি করেছে। তৃতীয় শক্তিকে তারা আসতে দেয় না। কিন্তু এ বারে আর তা হবে না।” মমতার দাবি, তৃতীয় শক্তিই ক্ষমতায় আসবে কেন্দ্রে। আর তার নেতৃত্ব দেবে তৃণমূল।
সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘টাকা দিতে পারি না বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশ আমাদের সমালোচনা করে। ভাল কাজ প্রশংসা পায় না। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের টাকা আছে। তাই সংবাদমাধ্যম তাদের হয়ে রাজ্যের ছোট ত্রুটি বড় করে তুলে ধরে। তবে যত সমালোচনা হয়, ততই আমি মনে করবো ঠিক পথে আছি।’’
এ দিন উলুবেড়িয়ার গরুহাটা ময়দানে সভা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তৃণমূল এ রাজ্যকে ‘শেষ করে দিচ্ছে’ বলে শাসক দলের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী নেতা। সেই সঙ্গে সারদা প্রসঙ্গ টেনেও তৃণমূলকে এক হাত নেন।
চুঁচুড়ার বক্সিং গ্রাউন্ডে এক সভায় হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী ও দলের সর্বভারতীয় নেতা মুকুল রায়। রাজ্যের সমস্ত চিটফান্ড সিপিএমের আমলে তৈরি হয়েছে বলে মুকুলবাবুর দাবি। পাশাপাশি, রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে একটিও চিটফান্ড তৈরি হয়নি বলেও দাবি করেছেন মুকুল। হেলিকপ্টারে চড়ে এলেও মিঠুন ও মুকুল সভা সেরে ফেরেন সড়ক পথে।
প্রতিবেদক: নুরুল আবসার, দেবাশিস দাস, তাপস ঘোষ, প্রকাশ পাল ও সুব্রত জানা।