নতুন গাড়ি নিয়ে সোমবার রাতে সাত বন্ধু মিলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে সেই গাড়িই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় ৩ জনের। গুরুতর আহত অবস্থায় বাকি চার জনকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন জীতেন্দ্র চৌধুরী (২২), সাধন বিশ্বাস ওরফে সুপন (২৬) এবং রাজা পাল (১৯)। রাজা এবং জীতেন্দ্র বিএ প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সকলেরই বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের চারাবাগান এলাকার চণ্ডীপুরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুপনরা। সুপন পেশাদার চালক। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনিই। গাড়ির মালিক শ্যামনগরের বাসিন্দা। দিন দু’য়েক আগে সেটি কেনা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু গাড়িতে কোনও কাগজপত্র ছিল না। এমনকী, পাকা নম্বরপ্লেটও লাগেনি। মালিকের খোঁজ করছে পুলিশের।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, সুপন বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। তাই একটু ঘুরতে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গীরাও বাড়িতে জানিয়েছিলেন, একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। রাতেই ফেরার কথা ছিল তাঁদের। ব্যারাকপুরের কাছে একটি পানশালায় খাওয়া-দাওয়া করে মঙ্গলবার ভোরে ফেরার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের অনুমান। চালক নিজেও নেশাগ্রস্থ ছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছে পুলিশ।
কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
পুলিশ জানায়, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ব্যারাকপুর থেকে জগদ্দল যাওয়ার পথে ইছাপুরের কাছে কয়রাপুর খাল। সেই খালের উপরে একটি ছোট সেতু আছে। দ্রুত গতিতে গাড়িটি সেই সেতুর উপরে উঠে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতু-লাগোয়া ফুটপাথে উঠে পড়ে। তারপরেই উল্টে পড়ে যায় নীচের খাল-পাড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের।
যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি এমনিতেই ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ হিসাবে চিহ্নিত। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সংস্কারের পরে এই রাস্তায় গাড়ির গতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা চওড়া করার কাজ মাঝপথে থমকে আছে। ফলে রাতের অন্ধকারে রাস্তার দু’দিকের ঢাল বোঝা যায় না। হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। তার উপরে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য পানশালায় রাত বাড়লেই ভিড় বাড়ছে। গভীর রাত পর্যন্ত নাচগান, খানাপিনা সেরে গাড়ি নিয়ে এই রাস্তা ধরে ফেরেন অনেকে। অভিযোগ, দেহ ব্যবসাও চলে একাধিক পানশালায়। মাস দেড়েক আগে নৈহাটির একটি পানশালায় নেশা করিয়ে ব্লু ফিল্ম তৈরি ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। গ্রেফতার হয়েছিল এক জন। কিন্তু মোটা টাকার লেনদেনের ফলেই উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক পদক্ষেপও হয় না বলে অভিযোগ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সি সুধাকর বলেন, “এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা যথেষ্ট উদ্বেগের। দুর্ঘটনাটিও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কী ভাবে তা ঘটল, বিশদে খতিয়ে দেখা হবে।”