—নিজস্ব চিত্র।
বুথের সামনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা হর্তাকর্তা গোছের এক ব্যক্তি মোবাইল হাতে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি। উত্তরে আমতা আমতা করছিলেন ওই ব্যক্তি। কোনও পরিচয়পত্রও দেখাতে পারলেন না। অবজার্ভারকে ডেকে সুভাষিণী বললেন, এই ব্যক্তিকে যেন অবিলম্বে বের করে দেওয়া হয় বুথ চত্বর থেকে। এরপরে নিজেই তাঁর হাত ধরে টেনে বের করে দেন সুভাষিণী।
উদ্বিগ্ন মুখে ব্যারাকপুরের যদুনাথবাটি শিবশঙ্কর জুনিয়র হাইস্কুলের বুথ থেকে বেরোতে বেরোতে সিপিএম প্রার্থী বললেন, “কী কাণ্ড চলছে বলুন তো! এ ভাবে কী সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব?”
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ২১টি পঞ্চায়েত এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগ আগেই তুলছিল বিরোধীরা। শনিবার রাত থেকেই বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভোটারদের নানা ভাবে শাসানি দিয়েছে শাসক দল, এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি। এই সব এলাকায় দিনভর গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন সুভাষিণী। নৈহাটির বালিভাড়া এলাকার একটি বুথে সত্যব্রত সরকার নামে এক ভোটারের অভিযোগ, যদুনাথবাটি শিবশঙ্কর হাইস্কুলে বুথের ভিতরেই তাঁর হাতে কালি লাগিয়ে দেয় এক জন। বলা হয়, ভোট আর দিতে হবে না। অভিযোগ শুনে সুভাষিণীদেবী নিজে গেলেন সেই বুথে। প্রিজাইডিং অফিসার সুজয় সরকারকে ঘটনার কথা জানান তিনি। তাঁর সঙ্গে খানিক বচসাও বাধে প্রার্থীর। অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে, এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বুথ থেকে। কোনও কোনও বুথে আবার খানিক ক্ষণ কাটিয়ে হুমকির চোটে বিরোধীদের এজেন্ট ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক জন সিপিএম এজেন্ট বালিভাড়ার দোলা মজুমদার। তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সুভাষিণীদেবী সে কথা জানতে পেরে দোলাদেবীকে নিজেই গাড়ি করে বাড়ি থেকে এনে বুথে বসিয়ে দিয়ে যান।
ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছে না, তেমন অভিযোগ দিনভর ঘুরে ফিরে বেরালো ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাতাসে। সকালের দিকে যার শুরুটা হয়েছিল ইভিএম মেশিন বিকল হওয়া দিয়ে। কোথাও এক বার বোতাম টিপলে দু’বার শব্দ হচ্ছে। কোথাও দু’চার বার বোতাম টিপেও ভোট পড়ছে না। এ দিকে ক্রমে বেলা গড়াচ্ছে। শেষমেশ গোটা ১৫ মেশিন বদলে দেয় নির্বাচন কমিশন। ভোর থেকেই চড়া রোদে বেশ খানিক ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় মেজাজও চড়েছে ভোটারদের।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ২১টি পঞ্চায়েত এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগ আগেই তুলছিল বিরোধীরা। শনিবার রাত থেকেই বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভোটারদের নানা ভাবে শাসানি দিয়েছে শাসক দল, এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি।
হুমকির অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। তাঁর দাবি, “সিপিএম এক সময় যে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে ভোট করেছে, এখন সেটাই আমরা করতে পারি ধরে নিয়ে ওরা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমরা তেমন কিছুই করিনি।” তাঁর দাবি, দু’একটি জায়গায় সিপিএমের এজেন্টকে বুথে বসতে তিনি নিজেও সাহায্য করেছেন। যা শুনে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ব্যারাকপুরের সিপিএম নেতা রঞ্জিৎ কুণ্ডু বলেন, “ওঁরা নাটক করছেন।”
ব্যারাকপুরের ছ’বারের সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদার বললেন, “দলের নিচুতলার কর্মীরা সন্ত্রস্ত। নানা ভাবে ভয় দেখানো হয়েছে তাঁদের। এজেন্টদেরও ভয় দেখানো হয়েছে। ভোটাররাও ভীত। এই অবস্থায় অনেক বুথে এজেন্ট দিতে পারিনি আমরা।”
তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী আবার কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন। টিটাগড়ে বাহিনী অনেককে লাঠিপেটা করে ভোট দিতে দেয়নি বলে তাঁর দাবি। ঘটনার কথা তিনি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। টিটাগড় নিয়ে তড়িৎবাবুর আবার বক্তব্য, “তৃণমূলের লোকজন বুথ জ্যাম করে রিগিং করতে চাইছিল বলে বাহিনী তাদের হঠিয়ে দিয়েছে। মানুষ ওখানে ভোট দিতে পেরেছেন।”
শ্যামনগরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সিআরপি শূন্যে গুলি চালায় বলে কংগ্রেস ও সিপিএমের অভিযোগ। এ নিয়ে মন্তব্য করেননি নির্বাচন কমিশনের পুলিশ অবজার্ভার বি চন্দ্রশেখর।
কংগ্রেসের তরফে আবার বহু বুথে ছাপ্পার অভিযোগ তুলে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। একই অভিযোগ বিজেপিরও। কংগ্রেস প্রার্থী সম্রাট তপাদারের দাবি, নোয়াপাড়ার একটি বুথে তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে।