ইমরানের জামাত যোগের তদন্তে ঢাকাও

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে কট্টর মৌলবাদী জামাতে ইসলামির যোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশ সরকার। বিদেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আজ এই খবর জানিয়েছেন। ইমরানের মাধ্যমে অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার কোটি কোটি টাকা জামাতের হাতে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার বাংলাদেশের সংসদে বিষয়টি আলোচনার জন্য গৃহীত হওয়ার পরেও সময়াভাবে তা স্থগিত রাখা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে কট্টর মৌলবাদী জামাতে ইসলামির যোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশ সরকার। বিদেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আজ এই খবর জানিয়েছেন। ইমরানের মাধ্যমে অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার কোটি কোটি টাকা জামাতের হাতে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

রবিবার বাংলাদেশের সংসদে বিষয়টি আলোচনার জন্য গৃহীত হওয়ার পরেও সময়াভাবে তা স্থগিত রাখা হয়। স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ।” এ নিয়ে আরও বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সময় নির্দিষ্ট করেছেন স্পিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ জানিয়েছে, তারা চায় ভারত সরকারও বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করুক। যাতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য পার পেয়ে না যায়।

আজ সংসদের অধিবেশনের পরে সংসদ চত্বরেই বাংলাদেশের বিদেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর তাঁদের নজরে এসেছে। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর বিপুল অর্থ জামাতে ইসলামির হাতে আসার অভিযোগে তাঁরা উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁরা ইতিমধ্যেই বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছেন। কী ভাবে, কাদের মাধ্যমে এই অর্থ বাংলাদেশের মৌলবাদীদের হাতে পৌঁছেছে, সে টাকা তার পরে কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তা খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শাহরিয়ার আলম বলেন, “দু’দেশের মধ্যে সুন্দর একটি সম্পর্ক রয়েছে। আশা করি দু’দেশের কেউই অপর দেশের জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে না।” আলম জানান, তিনি নিজে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজশাহির মানুষ। দু’বছর আগে জামাতে ইসলামির নেতৃত্বে এই অঞ্চলে এমন ভয়ঙ্কর হিংসা ও নাশকতা হয়েছে, যা আগে কখনও হয়নি। তাই রাজশাহির ভুক্তভোগী মানুষের তরফেও তিনি চান, কী ভাবে দুষ্কৃতীদের হাতে অর্থ ও অন্য সাহায্য এসেছে, তা দিনের আলোয় আসুক।

Advertisement

তবে যে মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামির বিরুদ্ধে সারদার বিপুল অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে বিষয়টি ষড়যন্ত্র। কিন্তু জামাতের এক নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অতি সম্প্রতি ওই দলের কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান বাংলাদেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকার তাঁদের প্রথম সারির নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মামলায় জেলে ভরার পরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিচিতি বেড়েছে। বেড়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও।

ওই জামাত নেতা জানিয়েছেন, আগে ভারতে তাঁদের কোনও সহযোগী ছিল না। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে প্রভাবশালী কিছু শিবিরের মাধ্যমে গত দু’তিন বছরে ভারতের কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে জামাতে ইসলামির যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।

রাজশাহির সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশার অভিযোগ, “জামাত নেতা যে সময়ের কথা বলেছেন, সেই সময়েই সারদার বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাটেও তখনই পরিবর্তন হয়।” রাজশাহির সাংসদের বক্তব্য, “তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের এক জন কর্তা হিসেবে পরিচিত। আতাউর রহমানের বক্তব্য থেকেই প্রমাণ হচ্ছে, ইমরানের মাধ্যমেই জামাত ভারত থেকে সাহায্য পেয়েছে।” তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হোসেন ইমরান অবশ্য গত কয়েক দিনে বার বার দাবি করেছেন, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে দেশদ্রোহী সাজানো হচ্ছে। তিনি জামাতের হাতে সারদার টাকা পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত নন।

বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে আলোচনায় আজ বাংলাদেশের সংসদের গোটা দিন কেটে যায়। ফলে, জামাতের হাতে ভারতীয় অর্থ আসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বরাদ্দ সময় সংক্ষেপিত হয়ে যায়। এক সাংসদ উঠে বিষয়টি নিয়ে বলা শুরু করা মাত্র স্পিকার বলেন, “এত কম সময়ে এমন একটা গুরুতর বিষয় নিয়ে সুষ্ঠু আলোচনা হয় না।” স্পিকার জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সময় নির্ধারণ করছেন।

জামাতকে সারদার বিপুল অর্থ পাঠানোর অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য আজ ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন আওয়ামি লিগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ। তিনি বলেন, “জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে সব রকম সাহায্য করছে। নয়াদিল্লি বার বার এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “আজ বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে ভারতের একটি প্রভাবশালী শিবির থেকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমরা চাই, ভারত সরকার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিক। রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য কেউ যেন ছাড় না পায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement