গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রতিবেশী দেশ থেকে এলেন গোয়েন্দারা। এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের নিয়ে ঘুরে দেখলেন বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের খুনের ঘটনাস্থল। কিন্তু খুনের পাথুরে প্রমাণ সাংসদের দেহাংশ, বা তা টুকরো করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে যে চপার দিয়ে, তার হদিশ মেলেনি।
এ দিন সকালে ঢাকার গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ দুই সহকর্মী আবদুল আহাদ এবং সাহেদুর রহমানকে নিয়ে কলকাতায় পৌঁছন। এ রাজ্যের ডিআইজি (সিআইডি) সোমা দাস মিত্র ও অন্য অফিসারদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে বিকেলে ভবানী ভবনে এডিজি সিআইডি আর রাজশেখরন-সহ সিআইডির অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ, সোমবার ফের তাঁরা ঘটনাস্থল যাবেন পরিদর্শনে। সিআইডির একটি দল ইতিমধ্যে বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসেছে।
সাংসদ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদকে জেরায় সিআইডি জানতে পেরেছে, ১৩ মে দুপুরে সাংসদকে খুনের পরে সন্ধ্যায় দেহ শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মদ্যপান করতে করতে পর দিন ভোর পর্যন্ত প্ল্যাস্টিকের উপর রেখে দেহ টুকরো করা হয়। দেহ কাটার সময় রক্তে জিহাদের জামা নষ্ট হওয়ায় সে সাংসদের পরনের শার্ট পরেই আবাসন থেকে বেরোয়।
এ দিনও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের সাতুলিয়ায় বাগজোলা খালে আনোয়ারুলের মৃতদেহের অংশের খোঁজে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে নিয়ে স্পিড বোটে সাংসদের দেহাংশ খোঁজার পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্যজীবীদেরও জলে নামানো হয়। তেমন কিছু উদ্ধার না হলেও সেখানে দেহাংশ ফেলা হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে, এমনটা খবর। মুষলধারে বৃষ্টির জন্য তল্লাশি কাজেও সমস্যা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, দেহাংশ খালের জলে ভেসে গিয়েছে। সাংসদের মাথা এবং হাড়গোড় কোথায় ফেলা হয়েছে তার খোঁজ করছে সিআইডি।
এ দিন কলকাতায় নেমে বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হারুন জানান, সে দেশে বসেই সাংসদকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ঘটনার মূল চক্রী আখতারুজ্জামান শাহিন নিহত সাংসদের বাল্যবন্ধু। কলকাতায় এসে সে খুনের দায়িত্ব আমানুল্লাকে দায়িত্ব দিয়ে ১০ মে বাংলাদেশ ফেরে। সেখান থেকে দিল্লি, কাঠমান্ডু হয়ে দুবাই চলে য়ায়। সন্দেহ করা হচ্ছে, সে আমেরিকায় গা-ঢাকা দিয়েছে। শাহিনকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হবে। হারুন বলেন, “এ দেশের পুলিশের সাহায্যে অপরাধীরা কোথায় কোথায় গিয়েছে তা যাচাইয়ের পাশাপাশি অপরাধের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করব।”
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সাংসদের খুনের ঘটনায় আমানুল্লা আমান-সহ তিন জনকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য দিকে, খুনে যুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সিআইডির দাবি, যে ভাড়ার গাড়িতে ট্রলি ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে টুকরো করা দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার চালকের সঙ্গে কথা
হয়েছে তদন্তকারীদের। জিহাদের বয়ানের সঙ্গে ওই চালকের কথার মিল আছে। বাগজোলা খাল এলাকার একটি সিসি ক্যামেরায় জিহাদ এবং সিয়ামের (আরেক অভিযুক্ত) ছবিও উঠেছে।
আমানুল্লাকে জেরা করে পাওয়া তথ্য সিআইডিকে দিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। পাশাপাশি জিহাদকে জেরা করেন তাঁরা। জিহাদ বাংলাদেশে কোথায় থাকে, তার আগের ইতিহাস খতিয়ে দেখে বাংলাদেশের দলটি। এক সিআইডি কর্তা জানান, পড়শি দেশের গোয়েন্দাপ্রধান ঘটনাস্থল ঘুরে অফিসারদের থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি জিহাদকে জেরাও করেছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, দু’দিন আগে গোয়েন্দারা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধৃত আমানুল্লাকে কলকাতা থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সূত্রের দাবি, আমানুল্লা পুরো ঘটনার দায় আখতারুজ্জামান শাহিনের উপরে চাপিয়েছেন।