Mamata Banerjee

মাসিমা, দিদির মিটিংয়ে যাচ্ছি! অস্ত্র নিয়ে কালীঘাটে যাওয়ার আগে পরিচিত বৃদ্ধার আশীর্বাদ চান নুর

স্থানীয় বৃদ্ধা শেফালি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলতেন নুর। ব্যবহারও ভাল। তাঁর ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ তোলেননি শেফালির ছেলে কৃষ্ণও। তিনি জানিয়েছেন, কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না নুর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৭:৩২
Share:

স্থানীয়দের দাবি, পাড়ায় কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না শেখ আমিন নুর। ছবি: সংগৃহীত।

শুক্রবার সকালে দোকান থেকে যখন বার হয়েছিলেন, কাছে বসেছিলেন স্থানীয় এক বৃদ্ধা। কালো গাড়িতে চেপে রওনা হওয়ার আগে সেই বৃদ্ধার কাছে আশীর্বাদ চেয়েছিলেন শেখ আমিন নুর। তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘দিদির মিটিংয়ে যাচ্ছি। আমায় আশীর্বাদ করুন।’’ বৃদ্ধা যদিও তখন বোঝেননি, হঠাৎ কেন এ সব বলছেন নুর, যিনি কিনা অন্য দিন তেমন কথাই বলেন না! পরে টিভিতে খবর দেখে গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয় বৃদ্ধার কাছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে নুর যাননি। তার বদলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিতে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন ওই যুবক। তাঁর কালো গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িতে লাগানো ছিল ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার। আটক হন নুর। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

Advertisement

প্রায় তিন বছর পঞ্চান্ন গ্রামের মার্টিনপাড়ায় একটি দোকান রয়েছে নুরের। স্থানীয়দের দাবি, দোকানটি তিনি কিনেছিলেন। ‘ইন্টেরিয়র ডেকরেশন’-এর ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ওই দোকানে বসেই কাজ সামলান তিনি। স্থানীয় কৃষ্ণ দাসের দাবি, ‘‘দোকানটি বেশ সাজানো-গোছানো। মাঝেমধ্যে সেখানে নুরের এক ভাই আসতেন।’’ ওই দোকানের পিছনে একটি ঘরে থাকেন নুর। এর আগে ওই মার্টিনপাড়াতেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। যদিও নুরের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। সেই কারণেই শুক্রবার সকালে স্থানীয় বৃদ্ধা শেফালি দাসের কাছে যখন আশীর্বাদ চেয়েছিলেন নুর, তখন তিনি বেশ হতবাক গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বসে রয়েছি। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন উনি। বললেন, দিদির মিটিংয়ে যাচ্ছি। আমায় আশীর্বাদ করুন। হঠাৎ করে। কী আশীর্বাদ করব! এই প্রথম এ রকম করলেন যে!’’

তবে শেফালি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে এমনিতে মাঝেমধ্যে কথা বলতেন নুর। ব্যবহারও ভাল। তাঁর ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ তোলেননি শেফালির ছেলে কৃষ্ণও। তিনি জানিয়েছেন, কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। পাশে থাকতেন, শুধু সেই হিসাবেই তিনি চেনেন। কৃষ্ণের কথায়, ‘‘উনি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন না। এক বার বাড়িতে ঢুকলে বার হতেন না। কেউ আসতেন না ওঁর কাছে।’’ তবে গাড়ি রাখা নিয়ে এক বার তাঁর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল, সে কথাও জানিয়েছেন কৃষ্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তিনি কথা শোনেন না বলে এড়িয়ে যেতাম।’’ যে গাড়িতে চেপে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিতে ঢুকতে চেয়েছিলেন নুর, তাতে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার ছিল। সেই স্টিকারের প্রসঙ্গ কৃষ্ণের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘গাড়িতে পুলিশের স্টিকার ছিল। জিজ্ঞেস করলে বলেন, পুলিশের এক ম্যাডামকে নিয়ে আসার কাজ করি, তাই ওটা লাগানো। কয়েক মাস আগে নম্বর প্লেটে পুলিশের যেটা লেখা থাকে, সেটা তুলে দিলেন। তবে গাড়ির উপর পুলিশ লেখা তোলেননি।’’ শুক্রবার সকালে নুরের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভোজালি, আগ্নোয়াস্ত্র মিলেছে। সেই আগ্নেয়াস্ত্র প্রত্যক্ষ করেছিলেন মার্টিনপাড়ায় তাঁর প্রতিবেশীরাও। কৃষ্ণ জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে এক বার বচসার সময় নিজের আগ্নেয়াস্ত্র বার করেছিলেন নুর। তবে সেটা আসল না নকল, তা জানেন না তিনি। কৃষ্ণের কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে অস্ত্র নিয়ে এক জনকে ভয় দেখিয়েছিলেন। ভোরবেলা একটা গাড়ি ঢুকছিল। ওঁর দোকানের সিঁড়িতে লাগে। তিনি শুয়েছিলেন তখন। বেরিয়ে এসে অস্ত্র দেখিয়ে বলেন, চালিয়ে দেব।’’

নুরের স্ত্রী পুনম বিবি অবশ্য এই অস্ত্রের বিষয়টি মানতে চাননি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জের বাসিন্দা তিনি। পুনম জোর গলায় দাবি করেছেন, ‘‘যে অস্ত্রের কথা বলছেন, সেটা লাইটার।’’ তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালেই নুরের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। নুর তাঁকে জানিয়েছেন, শনিবার রাতে বাড়িতে আসবেন। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন। পুনমের কথায়, ‘‘নুর বলেন, শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশ রয়েছে। তিনি হিউম্যান রাইটসের প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের স্টেট মেম্বার। ওখান থেকে সমাবেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ রয়েছে। ব্যস, এতটাই কথা হয়েছে।’’ আদতে নুর কী করেন? তাঁর স্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তিনি বিএসএফের কটস্‌ সরবরাহ করতেন। এখন ইন্টেরিয়র ডেকরেশনের ব্যবসা করেন।’’ তাঁর শ্বশুর মুন্না হাজিরও একই কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেদিনীপুরের শ্বশুরবাড়িতে সাত-আট বছর ধরে থাকছেন নুর। মিলিটারিতে মাল সরবরাহ করতেন। জিনিস সরবরাহ করতেন। সেই কাজ ছেড়ে ঠিকাদারির কাজ শুরু করেন।’’ তবে জামাই যে আটক হয়েছেন, সে খবর জানা নেই বলেই জানিয়েছেন প্রবীণ মুন্না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement