ছবি: পিটিআই।
জাতীয় যুব দিবসের সকালে প্রতি বছরই বেলুড় মঠে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ থেকে পড়ুয়ারা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মঠে থাকায় রবিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকল বেলুড়ের মূল গেট। তার জেরে ওই দু’ঘণ্টা গেটের বাইরে জমল দর্শনার্থীদের ভিড়।
এ দিন বাইরে যখন গেট খোলার অপেক্ষায় মানুষ বসে রয়েছেন, তখন মঠের বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে ধ্যান-প্রণাম সারলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আবার যোগ দিলেন যুব দিবসের অনুষ্ঠানে। যাওয়ার সময়ে সন্ন্যাসীদের ‘আবার আসবেন’ কথার উত্তরে বললেন, ‘‘ভগবান চাইলে ২০২০-তেই আসব।’’
এ দিন ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ মঠের মূল মন্দিরে মঙ্গলারতি দেখার সম্ভবনা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। শেষ পর্যন্ত তিনি যাননি। বরং ‘নতুন জায়গায় কেমন ঘুম হল?’ —সন্ন্যাসীদের প্রশ্নে মোদী বলেছেন, ‘বেলুড় মঠে থেকে আমি ভাগ্যবান। ঘুম না হওয়ার কারণই নেই। বরং একটু বেশিই ঘুমিয়েছি।’
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগরে যাতায়াত শুরু হেলিকপ্টারের
বেলুড় মঠের অতিথি নিবাসে এই ঘরেই রাত কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —নিজস্ব চিত্র।
মঠ সূত্রের খবর, শনিবার রাত ১০টার মধ্যে খাওয়ার পর্ব মিটিয়ে সকলকে ‘শুভ রাত্রি’ জানিয়ে অতিথি নিবাসের ঘরে ঢুকে যান মোদী। যাওয়ার আগে বলেন, ‘সারাদিন কোনও কাজ হয়নি। এ বার দেশের কাজ করতে হবে।’ এর পরে ঘরে ফাইল নিয়ে বসে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। কথা প্রসঙ্গে সন্ন্যাসীদের মোদী জানান, শোয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তাঁর ঘুম এসে যায়। রাতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমোন তিনি। এ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে সকাল ৬টার মধ্যে দক্ষিণী কায়দায় সাদা ধুতি-ফতুয়া পরে তৈরি হয়ে যান মোদী। থেপলা, চিনি ছাড়া আদা-দুধ চা এবং চিড়ের উপমা খেয়ে সকাল ৮টা নাগাদ স্বামী বিবেকানন্দের ঘরে যান তিনি। সেখানে কিছু ক্ষণ ধ্যানও করেন। পরে বলেন, ‘‘স্বামীজির ঘরে আমার জীবনের অমূল্য সময় কাটানোর সুযোগ মিলেছিল। মনে হচ্ছিল, স্বামীজি আমাকে দেশের জন্য আরও অনেক বেশি কাজ করতে বলছেন।’’
আরও পড়ুন: ধর্মের ‘জুজু’, পুণ্যার্থীদের শিবির এ বারও সেই ময়দানে
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা রাজনীতির বাইরে। মোদীও দাবি করেন, ‘সারা জীবনই বেলুড় মঠে আসা মানে নিজের ঘরে আসা’। সেই ঘরের ছেলের থাকার বন্দোবস্ত ও আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখেননি মঠ কর্তৃপক্ষ। শনিবার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে আলাপচারিতার পরে অতিথি নিবাসের দোতলায় যান মোদী। সেখানে ঢোকার সময়ে এক সন্ন্যাসী জানতে চান ‘আপনি কেমন আছেন?’ গুজরাতিতে প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে মোদী ওই ভাষাতেই উত্তর দেন, ‘‘আগে যেমন ছিলাম, এখনও তেমনই আছি।’’
তাঁর ২০১ নম্বর ঘর লাগোয়া ২০২ নম্বর ঘরে ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। তেমন বিশেষ কোনও পছন্দ না থাকলেও মোদী পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রান্না ও গরম খাবার পছন্দ করেন জেনে, তেমনি ব্যবস্থা হয়েছিল। রাতে শ্রীরামকৃষ্ণকে নিবেদিত ভোগ কপালে ঠেকিয়ে অল্প করে মুখে তুললেও পায়েসটা পুরো খেয়েছেন তিনি। আর খেয়েছেন রুটি, গুজরাতি খিচুড়ি, সেওভাজা-টম্যাটোর তরকারি, বেগুন ভর্তা, মটর পনির, শ্রীখণ্ড (গুজরাতি দই), মোয়া, সন্দেশ। সঙ্গে ছিল পোস্তর বড়াও। খাবার শেষে শ্রীরামকৃষ্ণের ভোগে থাকা পানের লবঙ্গ মোদীকে দিতে যাওয়া হলে তিনি গোটা পানই খান।
মোদী যে ঘরে ছিলেন সেখানে সিঙ্গল বেড, নতুন কম্বল এবং টেবিল ল্যাম্প, হট-লাইন টেলিফোন, সোফা-সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর জামাকাপড় ধোয়া-ইস্ত্রি করা এবং জুতো পালিশের জন্যেও দু’জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এ দিন মঠের মূল মন্দিরে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রণাম সেরে, সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে ছবি তুলে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। যেখানে মোদী বলেন, ‘‘দেশবাসীর কাছে বেলুড় মঠ তীর্থভূমি, অন্য তীর্থভূমির থেকে কম নয়। আমাকে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট মহারাজ ও অন্যান্য প্রবীণ সন্ন্যাসীদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ অনুষ্ঠান থেকে অতিথি নিবাসে এসে ফের অল্প চা খেয়ে মঠ ছাড়েন মোদী।