প্রতি শুক্রবারই ‘শান্তিকুঞ্জে’র সামনে ভিড় জমান দুঃস্থ সংখ্যালঘু মহিলারা। —নিজস্ব চিত্র।
সংখ্যালঘু প্রশ্নে বাড়ির ‘মেজ ছেলে’র মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য। তবে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জে’র পরম্পরা কিন্তু মুসলমানদের পবিত্র জুম্মাবারে দানধ্যান করা। মহরমের দু’দিন পরে এই শুক্রবারেও তার অন্যথা হল না। দুঃস্থ, ভিক্ষাজীবী যে মহিলারা এ দিন অধিকারী বাড়ি থেকে সাহায্য নিয়ে গেলেন, তাঁরা বললেন, “খালি হাতে কখনও ফিরতে হয়নি। বরং মেজবাবু থাকলে বাড়তি দানধ্যান করেন।”
অথচ শান্তিকুঞ্জের ‘মধ্যম পুত্র’ শুভেন্দু অধিকারীই দলের বৈঠকে বলেছেন, “রাষ্ট্রবাদী মুসলিম আর বলব না। যাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে থাকব। ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ বন্ধ করো।” আরও জুড়েছেন, “সংখ্যালঘু মোর্চার প্রয়োজন নেই।” শুভেন্দুর এই মন্তব্যের বিরোধিতা হচ্ছে বিজেপিতেই। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সব মানুষ দীর্ঘদিন তাঁকে চেনেন, তাঁদের এই শুভেন্দুকে অচেনা ঠেকছে।
সেই দলে আছেন এই ভিক্ষাজীবী মহিলারাও। শুক্রবার দুপুরে জনাদশেক মুসলিম মহিলা অধিকারী বাড়ি থেকে অর্থসাহায্য নিয়েছেন। এর ফাঁকে ওই মহিলারা জানান, তাঁরা কাঁথিরই বাসিন্দা। চেয়েচিন্তেই চলে। এক মহিলা বললেন, “প্রত্যেক জুম্মাবারে এই বাড়ি থেকে দানধ্যান করে। বড়বাবু (শিশির অধিকারী) দু’-তিনশো টাকা দেন। আর মেজবাবু থাকলে ৫০০ টাকাও দিয়ে দেন।” স্থানীয় এক দোকানির কথায়, “দাদা (শুভেন্দু) বাড়িতে থাকলে এঁরা আর কোথাও না ঘুরে সোজা অধিকারী বাড়িতেই চলে আসেন।” বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার তমলুক জেলা সভাপতি শেখ সাদ্দাম ও কাঁথি জেলা সংখ্যালঘু মোর্চার সাধারণ সম্পাদক শেখ আসফাকউদ্দিনও বলছেন, “শান্তিকুঞ্জে কোনও দিন আমাদের সঙ্গে পৃথক আচরণ করা হয়নি।”
তা হলে, এখন কেন সংখ্যালঘুতে আপত্তি বিরোধী দলনেতার? বিজেপির তমলুক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের মতে, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন শুভেন্দু। কারণ আমাদের দল বা বিরোধী দলনেতা সংখ্যালঘুদের জন্য যে হারে উন্নয়ন করছেন, সেই অনুপাতে বিজেপি ভোট পায়নি।” শুভেন্দুর বাবা শিশিরেরও ব্যাখ্যা, “কয়েকটি ঘটনা পরম্পরার প্রেক্ষিতে শুভেন্দু এ কথা বলেছে। তবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে শুভেন্দু বা আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, “শুভেন্দু নিজে প্রতি মাসে সংখ্যালঘু মায়েদের ছ’হাজার টাকা দেয়। সৌমেন্দু আর দিব্যেন্দুও নিয়মিত দান করে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ২০ জন সংখ্যালঘুর নিয়মিত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করি।” এই মহরমে ভিন্ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ফেরার ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান শিশির।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “লোকসভায় বিজেপি হেরে যাওয়ায় শুভেন্দু দিশাহারা। মনে হচ্ছে, বিজেপিতে মানাতে পারছেন না।”