সদ্যোজাতকে আগলে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ধানশোল গ্রামের কাছে। ছবি: শুভ মিত্র।
দিন চারেক আগেও হাতির দলের দাপাদাপিতে ক্ষুব্ধ ছিলেন এলাকার চাষিরা। বিঘার পর বিঘা ফসলের ক্ষতির পরে হাতি তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। হিমশিম খাচ্ছিলেন বনকর্মীরাও।
রাতারাতি সেই ছবিটাই বদলে গেল এক হস্তিশাবকের জন্ম ঘিরে। চাষি, বনকর্মী থেকে এলিফ্যান্ট স্কোয়াড— সকলেই মা ও নবজাতকের যত্নে তৎপর হয়ে উঠলেন। তাঁরাই ঘিরে রাখলেন গোটা এলাকা। এমনকি, সদ্যোজাতকে নিয়ে ফেরার পথে হাতির দল যে ধান নষ্ট করল, তাতেও বিশেষ আমল দিলেন না চাষিরা।
যে জঙ্গলমহল হাতি-মানুষ সংঘাত দেখতেই অভ্যস্ত, সেখানেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দেখা গেল এমনই ভিন্ন ছবি। প্রায় ৪০টি হাতির দলটি পাঞ্চেত ডিভিশনে ঢুকে পড়েছিল। সোমবার সন্ধেয় শাবক জন্মের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে সদ্যোজাতকে নিয়েই রূপনারায়ণ ডিভিশনের দিকে চলে গিয়েছে দলটি।
হাতির দল কয়েক দিন ধরে জঙ্গল ও জঙ্গলের বাইরে সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছিল বলে জানালেন বাঁকাদহ রেঞ্জের আধিকারিক তপোব্রত রায়। তিনি বলেন, “হাতির দলটি পাঞ্চেত ডিভিশনে ঢোকার পরই গতি মন্থর ছিল। কয়েকটি হাতি সুরক্ষা বলয় তৈরি করে অন্য হাতিদের নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, হয়তো দলে কোনও অসুস্থ হাতি আছে। তবে সন্তানসম্ভবা হাতিটির কথা জানতে পারিনি।”
বন দফতর সূত্রে খবর, সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ বাঁকাদহ রেঞ্জের আমডহরা বিটের চক উপরশোল মৌজার চিলিং বাঁধের কাছে ওই হস্তিশাবকটির জন্ম হয়। তখন জঙ্গলের চারদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল দলের বাকি সদস্যরা। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সদ্যোজাত শাবককে সঙ্গে নিয়ে হাতির দলটি রূপনারায়ণ ডিভিশনের দিকে রওনা দেয়।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার হাতিগুলি দুই ডিভিশনের মাঝে জঙ্গলের কলাবাগানে আশ্রয় নিয়েছে। সদ্যোজাতকে ঠেলে ঠেলে মা হাতি প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ গিয়েছে। রাস্তায় পড়েছিল ধানশোল, দুলেপাড়া ও খড়িকাশুলি। সেখানে গ্রামের মানুষও বনকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। শেষমেশ হাতির দল নিরাপদেই পৌঁছেছে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমানা কলাবাগান এলাকায়। যাওয়ার পথে যাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সেই স্থানীয় কৃষক বিধুভূষণ দে, নিরঞ্জন কুণ্ডু, উত্তম দে, সুশীল কুণ্ডুরাও বলছেন, “সন্তান নিয়ে ওরা সুস্থভাবে ফিরে যাক। ধানের যা ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা সয়ে নেব।” শাবক-সহ হাতির দলটি রাতে শিলাবতী পেরিয়ে ধাদিকার জঙ্গলে ঢুকতে পারে।
সদ্যোজাত শাবকটি মেয়ে। জয়রামবাটি সড়কের কাছে জন্মানোয় তার নাম রাখা হয়েছে সারদা। সে কথা জানিয়ে বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত বন বিভাগের এডিএফও বীরেন
কুমার শর্মা বলেন, ‘‘সদ্যোজাতকে নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। আসলে মা হাতিটিকে দেখে অন্তঃসত্ত্বা বোঝা যায়নি। তবে গ্রামবাসী থেকে বনকর্মী, সকলের সহযোগিতার জন্য আমরা গর্বিত।’’