মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ফাইল চিত্র।
খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছিলেন তাঁকে। নেটমাধ্যমে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী যে সব পোস্ট করেন তাতে দলের বিড়ম্বনা বাড়ছে। জানতে পেরে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সময় নিজের ঘরে ডেকে মনোরঞ্জনকে এ সব করতে বারণও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তার পর বিধায়ক জানিয়েছিলেন, আর নেটমাধ্যমে থাকবেন না। কিন্তু কোথায় কী! কয়েক দিনের বিরতি। ফের স্বমহিমায় মনোরঞ্জন। একের পর এক বিস্ফোরক পোস্ট নেটমাধ্যমে। ফলে আবারও অস্বস্তিতে দল। এ সব করে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করছেন বলাগড়ের বিধায়ক, এমনটাই মনে করছে তৃণমূল। তাই ‘লাগাম পরানো’র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে আভাস মিলেছে মনোরঞ্জনের কথাতেও। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছেন, ‘‘দল থেকে আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে। আমি আর কোনও কথার জবাব দেব না। যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন।’’
দিন কয়েক আগেও নেটমাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বলাগড়ের বিধায়ক। মমতা বারণ করার পরেও মনোরঞ্জনের এমন কাজে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও অখুশি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলছেন, ‘‘মনোরঞ্জন ব্যাপারী হোক বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সবার জন্যই দলীয় শৃঙ্খলা এক। কোনও বিষয়ে অসুবিধা হলে দলের অভ্যন্তরেই বলতে হবে। বাইরে নয়।’’
নাম না করে সম্প্রতি নেটমাধ্যমে বলাগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাজিকে আক্রমণ করেছেন মনোরঞ্জন। তিনি লিখেছিলেন, ‘যারা বন্দুক রিভলভার দেখিয়ে ভোটে জেতে, তাদের জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা থাকে না। তাঁরা মনে করে ওই ভাবে বার বার জিতে যাবে। আমি তেমন ভাবে জিতিনি, জিততে চাই না।’ এই পোস্টের কয়েক দিন আগে বলাগড়ের তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি পোস্ট করে মনোরঞ্জন লিখেছিলেন, ‘বেইমান বিশ্বাসঘাতকদের জন্য লোকসভা ভোটে ৩৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা সিট পুনরুদ্ধার করেছে ৯ হাজার লিড নিয়ে।’ এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘‘তুমি যে ‘প্রাক্তন’কে তৃণমূল দলে নিয়ে এসেছিলে, দলের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলে, যে পরে তোমার পদটাই খেয়ে নিয়েছিল।’ এই পোস্টের পর বলাগড়ে তৃণমূলকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। নাম না করলেও, তাঁর এমন ফেসবুক পোস্টের নিশানায় যে প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাজি তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। অসীমকে সরিয়ে বলাগড়ে মনোরঞ্জনকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। খোদ দলনেত্রী বারণ করার পরেও মনোরঞ্জন এ সব পোস্ট করায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন। দলের অভ্যন্তরীণ ‘রাজনীতি’ প্রকাশ্যে নিয়ে আসায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হন বিধায়কের উপর।
মনোরঞ্জনের এই সব পোস্ট নিয়ে অসীম বলছেন, ‘‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেই মতপার্থক্য থাকে। সে ভাবে বলাগড়ের সংগঠনেও অল্প বিস্তর সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে বিধায়ক দলের বিষয় নিয়ে ফেসবুকে লিখছেন কিংবা প্রকাশ্যে মন্তব্য করছেন, তাতে সংগঠনে প্রভাব পড়ছে। আমি বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
এ সব নিয়ে মনোরঞ্জন যদিও কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। তিনি শুধু বলছেন, ‘‘যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন।’’ মনোরঞ্জন যাঁর কথা বলছেন, তৃণমূলের সেই হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব যদিও বলছেন, ‘‘যে কোনও দ্বিমত নিয়ে দলের মধ্যেই আলোচনা হওয়া উচিত।’’ তার বেশি তিনিও কিছু বলছেন না।