ফাইল চিত্র।
ভাবগতিক দেখে ভাবা হয়েছিল, দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঝি বদল এসেছে। দেখা গেল, শেষ মুহূর্তে আয়ুর্বেদ দিবসের অনুষ্ঠান সূচিই গেল বদলে!
এ বছর ঘটা করে আয়ুর্বেদ দিবস পালনের জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ১ অক্টোবর একটি নির্দেশিকা (মেমো নম্বর: ৩৭৫/এইচএফ/আয়ুষ/সমিতি-৫৫/১৭) পাঠিয়েছিল। সেই নির্দেশিকায় স্বাস্থ্যজেলা-সহ রাজ্যের প্রতিটি জেলাকে ট্যাবলো, শিক্ষামূলক প্রচার (আইইসি), সেমিনার, বিশেষ স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করতে বলা হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কখন, কোন অনুষ্ঠান হবে, বলে দেওয়া হয়েছিল তা-ও। এর জন্য বরাদ্দ আট গুণ বাড়িয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা করা হয়। গত বছর আয়ুর্বেদ দিবসের বরাদ্দ ছিল ছ’হাজার টাকা।
কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার আয়ুর্বেদ দিবসে সেই নির্দেশের প্রতিফলন ঘটার সম্ভাবনা নেই। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এমন পূর্বাভাস ছিল না। বরং ভিডিয়ো-সম্মেলনের পরে কী ভাবে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়া যায়, তা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। উলটপুরাণ কেন, তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের এক কথায় জবাব, ‘‘অনিবার্যকারণবশত।’’
সেই কারণের সঙ্গে তিন বছর আগেকার যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশ। তাঁরা জানান, ২০১৫ সালে যোগ দিবস পালনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে কর্মসূচির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন নেতা-মন্ত্রীরা। আধিকারিকদের দাবি, যোগ দিবসের ধর্মীয় অনুষঙ্গ বিচার করে বিধানসভা ভোটের আগে সংখ্যালঘু মহলে ভুল বার্তা যাক, তা চায়নি শাসক দল। তার পরে আয়ুর্বেদ দিবসে এক ধাক্কায় বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখে আয়ুষের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা ভেবেছিলেন, দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল ঘটেছে। কিন্তু কর্মসূচি কাটছাঁটের খবর পেয়ে আয়ুষের এক মেডিক্যাল অফিসার বলেন, ‘‘শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মাইক ও মঞ্চের জন্য বলা হয়েছিল ডেকরটর্সকে। সব বাতিল করে দেওয়াটা হাস্যকর।’’
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, কেন ঘটা করে আয়ুর্বেদ দিবস পালন করা হচ্ছে, দফতরের শীর্ষ স্তর থেকে সেই বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করার পরেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বিভিন্ন জেলায় ফোন করে কর্মসূচিকে সেমিনারের মধ্যে বেঁধে রাখার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য ভবন। সেই পরামর্শে কী বলা হয়েছে, বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রতিক্রিয়া থেকেই তা অনুমেয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘আয়ুর্বেদ দিবস পালিত হচ্ছে, তবে তেমন করে হচ্ছে না।’’ হাওড়ার স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘র্যালি হচ্ছে না। জেলা হাসপাতালে শিবির হবে। মাইক-টাইক বাজবে না।’’ উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘বারাসত হাসপাতালে ছোট করে যা হওয়ার হবে।’’ আর বাঁকুড়ার স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘র্যালির পরিকল্পনা করেছিলাম। তবে আবহাওয়া খারাপ!’’