ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় মশা মারার কামান দাগা হয় হুগলিতে। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা লাগোয়া দুই শহর হাওড়া এবং হুগলিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। হাওড়ায় সব মিলিয়ে ডেঙ্গিতে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। অন্য দিকে, হুগলিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। যার মোকাবিলায় রাজনৈতিক মতাদর্শের ফারাক ভুলে কোমর বেঁধে নেমেছে শাসক, বিরোধীরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, হাওড়ায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়। চলতি বছরে হাওড়া পুর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে, এই মুহূর্তে ১৯৭ জন আক্রান্ত (সক্রিয় রোগী) রয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। যে সমস্ত কারখানা ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় জল জমে থাকছে, তাদের নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তার পরেও সহযোগিতা না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসইউডিএ) থেকে পতঙ্গবিদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার দু’জন অফিসার এবং এক জন নোডাল অফিসার রয়েছেন, যারা প্রতি দিন ডেঙ্গি পরিস্থিতি নজরে রাখছেন। তবে মানুষ সচেতন না হলে পুরোপুরি ভাবে ডেঙ্গি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই পুরসভার পক্ষ থেকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।’’
হাওড়ার মতোই হুগলিতেও চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গির পরিসংখ্যান। যদিও এই জেলায় ডেঙ্গির মোকাবিলায় এ বার পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধী এবং নির্দল— একযোগে ময়দানে নেমে পড়ল। মঙ্গলবার সকালে চুঁচুড়ায় ডেঙ্গি সচেতনতায় অভিযানে নামে বিজেপি। এলাকার জমা জলে ছাড়া হয় গাপ্পি মাছ। নর্দমায় ব্লিচিং পাউডারও ছড়ানো হয়। মশা মারার কামান দাগেন নির্দল কাউন্সিলর হরিপদ পাল। এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি যাতে জল না জমে, সে জন্যও বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন তিনি।
গত ৫ বছরে হুগলি জেলার ডেঙ্গির রেখচিত্র অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্ত বাড়লেও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা নিম্নমুখী। জেলার কোন্নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা মারার তেল স্প্রে করার পাশাপাশি আবর্জনা পরিষ্কারে জোর দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পুর এলাকায় কাজ চালাচ্ছে কোন্নগর পুরসভা। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী, পুরপ্রতিনিধি থেকে সমস্ত কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। পুর এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধায় ডেঙ্গির নমুনা পরীক্ষার জন্য কয়েক দিন আগে কোন্নগর পুরসভার স্বাস্থ্যভবনে একটি মেশিন বসানো হয়েছে।’’
সম্প্রতি হুগলি জেলায় ডেঙ্গির পরিসংখ্যান দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘‘গত ৫ বছরে হুগলি জেলার ডেঙ্গির রেখচিত্রে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। ডেঙ্গি সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা হুগলি জেলাটাই হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, বেশ কিছু পুরসভা ও পঞ্চায়েতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।’’ যদিও তাঁর দাবি, কোন্নগরের পাশে উত্তরপাড়া এবং রিষড়া পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হলেও কোন্নগরে সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি ডেঙ্গি। হাতেগোনা কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন।’’ অন্য দিকে, বৈদ্যবাটি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত বাড়ছে।