তপন রায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী তপন রায়। শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাঁকে প্রথমে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এরপরে চলতি মাসে প্রথম দিনেই তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। তবে তাঁর জ্ঞান ফেরেনি আর! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘একজন সর্বক্ষণের দলীয় কর্মী, পরিশিলীত স্বভাবের সৎ ভদ্র ও একজন সংস্কৃতিবান মানুষকে আমরা হারালাম। জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির উন্নতিতে উনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।’’
সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তপনবাবু। দল ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালে। একটি প্রগতিশীল এবং বর্ধিষ্ণু গ্রামের মানুষ হওয়ার সুবাদে স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বরদীশ রায় এবং বিশিষ্ট বাম নেতা অরুণ চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি তপনবাবুর। ছাত্র থেকে যুব আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করাই নয় সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন তিনি। ৭৮ সালে প্রথম ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় নির্বাচিত নগরী গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনিই প্রধান। গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নগরী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন তপনবাবু। সেই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ছিলেন অরুণ চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিধানসভায় দলের টিকিটে কংগ্রেসের সুনীতি চট্টোরাজের বিরুদ্ধে লড়েই জয় পান। সিপিএম দল সূত্রের খবর, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, সুনীতিবাবুকে সিউড়ি বিধানসভা থেকে আর নির্বাচিত দেখতে চান না। শুধু ৮৭ সালেই নয়, ৯১ সালেও সুনীতিবাবুকে হারিয়ে সিউড়ির বিধায়ক হন তপনবাবু। সেবারই প্রথম জোটে মন্ত্রীত্ব। তবে সুনীতি চট্টোরাজের কাছেই ৯৬ সালে হারতে হয়েছিল তপন রায়কে। ২০০৬ সালে তৃণমূলের স্বপনকান্তি রায়কে হারিয়ে ফের বিধায়ক ও দ্বিতীয় দফায় জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী হয়েছিলেন তপনবাবু। শোকার্ত পরিবার বর্গও। রেখে গিয়েছেন স্ত্রী ও দুই কন্যাকে। দল জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতেই তাঁর মরদেহ সিউড়ি পৌঁছবে। রবিবার সকালে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ থাকবে সিপিএমের জেলা কর্যালয়ে। সেখান থেকে নগরী গ্রামে ও তাঁর কর্মস্থল স্কুলে। বিকেলে বক্রেশ্বরে সম্পন্ন হবে অন্ত্যেষ্টি।