তাঁর টাকাতেই রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রী-নেতা-সাংসদদের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন চালানো হয়েছিল বলে নারদ নিউজের কর্ণধারের দাবি। তিনি কেডি সিংহ। খাতায়-কলমে তিনি এখনও রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য। যদিও সেই কেডি-র সঙ্গে সম্প্রতি দলের দূরত্ব বেড়েছে।
অ্যালকেমিস্ট নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থা রয়েছে কেডি-র। অ্যালকেমিস্ট এয়ারওয়েজ নামে সেই সংস্থার অধীনে রয়েছে একটি বিমান পরিবহণ কোম্পানিও। রয়েছে ছয় আসনের দু’টি বিচক্র্যাফ্ট বিমানও। এ বার কেডি-র সেই বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি জানানো হল সিবিআইয়ের কাছে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অমিতাভ মজুমদার সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন। সেই আর্জিতে বলা হয়েছে, কেডি-র ওই কোম্পানির মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কোনও ভাবে লাভবান হয়েছিলেন কি না, অবিলম্বে তা খতিয়ে দেখা হোক।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক বার ছয় আসনের একটি বিমান ব্যবহার করেছিলেন। খবর ছিল, সেই বিমানটি পাঠিয়েছিলেন কেডি-ই। কলকাতা থেকে এক বার দিল্লি আর এক বার নাগপুরে গিয়েছিলেন তিনি। এক বার দিল্লি থেকে জরুরি কারণে ওই বিশেষ বিমানে তিনি কলকাতায় ফিরেছিলেন। শুধু মমতা নয়, অন্য প্রভাবশালী রাজনীতিকেরাও বিভিন্ন সময়ে কেডি-র ওই বিমান ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছে সিবিআই।
তদন্তের এই আর্জি শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁর দলের সঙ্গেও তো শুনেছি কেডি-র বন্ধুবান্ধবদের যোগাযোগ রয়েছে। অমিতাভবাবু নিজেও কেডি-র বিমান ব্যবহার করেছেন কি না, জানি না।’’
আরও পড়ুন: কাজ হয়নি, বৈঠক নয়
সুপ্রিম কোর্ট যে-চুয়াল্লিশটি বেআইনি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে, তার মধ্যে অ্যালকেমিস্টের নাম নেই। যদিও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে অ্যালকেমিস্ট রিয়েলটি ও অ্যালকেমিস্ট হোল্ডিং কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেবি। কোনও ভাবেই তারা আমানতকারীদের কাছ থেকে আর টাকা তুলতে পারবে না বলে সেবি জানিয়ে দিয়েছে অ্যালকেমিস্টকে।
সিবিআইয়ের সূত্র জানাচ্ছে, সেবি-র নিষেধাজ্ঞার পরে ওই সংস্থাকে তদন্তের আওতায় আনার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে তারা আর্জিও জানাতে পারে। সে ক্ষেত্রে অমিতাভবাবুর আবেদনও কাজে লাগবে বলে মনে করছে সিবিআই।
অমিতাভবাবুর আর্জি, রোজ ভ্যালি ও সারদা সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তের ভিত্তিতে একাধিক নেতা ও মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। সে-ক্ষেত্রে কেডি-র সংস্থা অ্যালকেমিস্টের সঙ্গে প্রভাবশালী নেতাদের যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্যই সিবিআইয়ের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেডি-কে সাংসদ করাটাই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তার আগেই নারদ-কাণ্ডের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল দাবি করেন, স্টিং অপারেশনে কেডি-র সংস্থা অ্যালকেমিস্টের সল্টলেক অফিস থেকে পাওয়া টাকা দফায় দফায় ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও কেডি তা অস্বীকার করেছেন। অ্যালকেমিস্ট রিয়েলটি, অ্যালকেমিস্ট টাউনশিপ ও অ্যালকেমিস্ট হোল্ডিং সংস্থার বিরুদ্ধে সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলে সম্প্রতি বাগুইআটি থানাতেও কেডি-র সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ব্যক্তি।