পরীক্ষা দেরিতে শুরু হলেও যথাসময়ে ফল ঘোষণা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন উপাচার্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হল না। ফল না-বেরোনোয় অনেক পরীক্ষার্থী পরবর্তী পড়াশোনায় এগোতে পারছেন না। সর্বোপরি চাকরির সুযোগ পেয়েও তা হারানোর আশঙ্কা করছেন বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী।
২০১৫ সালে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ সেমেস্টারের ফল বেরিয়েছিল ১৭ জুলাই। এ বছর পরীক্ষা দেরিতে শুরু হওয়ায় ফল প্রকাশ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। উপাচার্য সুব্রত দে বলেছিলেন, পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হয়েছে ঠিকই। তবে ফল প্রকাশে বিলম্ব হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্বাসের প্রতিফলন ঘটল না। রবিবার, ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, এখনও খাতা দেখাই শেষ হয়নি। তাই কবে ফল বেরোবে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও খবরও নেই। ফল ঘোষণায় অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় চাকরির সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন শেষ সেমেস্টারের পড়ুয়ারা।
তবে উপাচার্য সুব্রতবাবু এ দিনও আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের অসুবিধা হচ্ছে, বুঝতে পারছি। আর মাত্র কয়েকটা দিন। খাতা দেখার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত ফল প্রকাশ করা হবে।’’ কিন্তু কবে? উপাচার্য দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম জানাচ্ছেন, ৩১ জুলাইয়ের আগে ফল প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তাদের অধীনে রয়েছে রাজ্যের প্রায় ৯৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এ ছাড়াও ম্যানেজমেন্ট, কারিগরি বিদ্যা, ফার্মাকোলজি পড়ানো হয়, এমন কলেজের সংখ্যা প্রায় ২০০। শেষ সেমেস্টারের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই জানান, তাঁরা সাধারণত পরীক্ষার আগেই চাকরির ‘অফার লেটার’ পেয়ে যান। তবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার নির্দিষ্ট দিনের আগে অবশ্যই তাঁদের মার্কশিট জমা দিতে হয়। সব দিক রক্ষার জন্য এত দিন জুলাইয়ের প্রথম দিকেই ফল প্রকাশ করা হতো। কিন্তু এ বার জুলাইয়ের দু’সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও ফল না-বেরোনোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কী রকম সমস্যা? ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ছাত্র প্রীতম দাশগুপ্ত জানান, তিনি ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের একটি সংস্থায় চাকরির অফার লেটার পেয়েছেন। কিন্তু মার্কশিট জমা না-দেওয়া পর্যন্ত তিনি চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমোদন পাবেন না। ‘‘উপাচার্যের আশ্বাস অনুযায়ী ওই সংস্থাকে জানিয়েছিলাম, জুলাইয়ের মাঝামাঝি মার্কশিট দিতে পারব। এখন আবার সময় চেয়ে আবেদন করতে হবে। কিন্তু ওরা আমাকে আর সুযোগ দেবে কি না জানি না,’’ প্রীতমের গলায় দুর্ভাবনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন দায়িত্ব নিয়েই গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন উপাচার্য। বিধানসভা নির্বাচনের জন্যও সমস্যা তৈরি হয়। ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করার জন্য বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে খাতা দেখার ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন উপাচার্য। কিন্তু তাঁর আশ্বাস সত্ত্বেও ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করা গেল না কেন, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না।