বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা গায়িকা-বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীকে আবার তলব করেছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার তিনি সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে দফতর থেকে বেরোন শাসকদলের কাউন্সিলর। জানান, তাঁকে আবার আগামী ৩১ জানুয়ারি হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সে দিন বেশ কিছু নথিও দেবরাজকে নিয়ে যেতে বলেছে সিবিআই।
বৃহস্পতিবার দেবরাজের পাশাপাশি আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকেও তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তিনিও সিবিআই দফতর থেকে বেরোন প্রায় একই সময়ে। তাঁকে আপাতত আর হাজিরা দিতে হচ্ছে না। বাপ্পাদিত্য জানান, আবার ডাকলে আবার তিনি হাজিরা দিতে রাজি আছেন। তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন তিনি।
সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে দেবরাজ বলেন, ‘‘নিয়োগ মামলায় আমার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। বুধবার নোটিস দিয়ে বৃহস্পতিবার আমাকে ডাকা হয়। আমার বাড়িতে ওরা কিছু নথি পেয়েছিল। সেগুলির ভিত্তিতে কয়েকটি তথ্য পরিষ্কার করে জানার ছিল ওদের। সেই নিয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও কিছু নথি আমার থেকে চেয়েছে। ৩১ তারিখ আবার ডেকেছে। সে দিন এসে বাকি নথি জমা দিয়ে যাব।’’ কিছু ব্যক্তিগত নথি চাওয়া হয়েছে বলে জানান অদিতির স্বামী। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় তাঁর যোগাযোগের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে দেবরাজ বলেন, ‘‘নিয়োগ বা বদলি সংক্রান্ত অভিযোগ প্রমাণভিত্তিক। আমি তদন্তে সহযোগিতা করেছি।’’
বাপ্পাদিত্য আবার জানান, সিবিআই দফতরে অধিকাংশ সময়েই তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বলেন, ‘‘আমাকে যা প্রশ্ন করেছে, আমি তার উত্তর দিয়েছি। তদন্তে সহযোগিতা করেছি। আবার ডাকলে আবার আসব। আমার বাড়ি থেকে যে কাগজ পাওয়া গিয়েছে, তার ৮০ শতাংশের সঙ্গে নিয়োগের সম্পর্ক নেই। বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যক্তির বায়োডাটা। ১০ শতাংশের বেশি ছিল আয়করের রিটার্ন সংক্রান্ত কাগজ এবং ব্যাঙ্কের নথি। এ ছাড়া, ১০ শতাংশেরও কম ছিল অ্যাডমিট কার্ড। তাতে কেউ চাকরি পাননি।’’
বাপ্পাদিত্যের কাছ থেকে চাকরির সুপারিশপত্রও পাওয়া গিয়েছিল। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার এক স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সুপারিশপত্র ছিল। তার সঙ্গে দুর্নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমাকে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়েছিল, সেই জন্যই ডাকা হয়।’’
নিয়োগ মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে কারা আসাযাওয়া করতেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে বলে জানান বাপ্পাদিত্য। বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, জানিয়েছি। সহযোগিতা করেছি। আমার কাছ থেকে কোনও নথি চায়নি। আমাকে আপাতত আর আসতেও বলা হয়নি।’’
দুই তৃণমূল নেতাকেই বুধবার নোটিস দিয়ে বৃহস্পতিবার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বলেছিল সিবিআই। সকাল ১১টা নাগাদ সিবিআই দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন দেবরাজ এবং বাপ্পাদিত্য।
উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত নভেম্বরে দেবরাজের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। এমনকি, বিধায়ক স্ত্রী অদিতির গানের স্কুলেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তল্লাশি অভিযানে দেবরাজের কাছ থেকে টেটের কয়েকটি মার্কশিট এবং বদলির আবেদনপত্র পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। ওই একই দিনে বাপ্পাদিত্যের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও চাকরি সংক্রান্ত নথি পাওয়া গিয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।