পুজোর ফিতে কাটছেন তন্ময়েরা, ‘না’ সুজনদের

মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী যখন তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন, দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান শ্রীহীরবাবু চণ্ডীপাঠ করতেন, সে ছিল অন্য যুগ। ধর্মীয় অনুষঙ্গের থেকে শত যোজন দূরে থাকাই তখন কমিউনিস্ট পার্টির রীতি। ধীরে ধীরে প্রথা ভাঙার চাপ বাড়ল কেরল থেকে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

সুজন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

পুজোয় আচার মেনে চণ্ডীপাঠ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন দক্ষিণ দমদমের শ্রীহীর ভট্টাচার্য। রথের রশি টানার পরে উত্তর দমদমের তন্ময় ভট্টাচার্য এ বার পুজো উদ্বোধন করছেন!

Advertisement

পরিবতর্নের হাওয়ায় কি তা হলে গা ভাসিয়েছে সিপিএম? যাদবপুরের সুজন চক্রবর্তীরা জানাচ্ছেন, না! তাঁরই দলের কিছু বিধায়ক যখন উদারনীতির আবহে পুজো উদ্বোধনে হাজির হচ্ছেন, বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু তখন আমন্ত্রণ পেয়েও ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী যখন তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন, দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান শ্রীহীরবাবু চণ্ডীপাঠ করতেন, সে ছিল অন্য যুগ। ধর্মীয় অনুষঙ্গের থেকে শত যোজন দূরে থাকাই তখন কমিউনিস্ট পার্টির রীতি। ধীরে ধীরে প্রথা ভাঙার চাপ বাড়ল কেরল থেকে। এ রাজ্যেও আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা দলের অনুমতি পেলেন হজে যাওয়ার। সে সব পেরিয়ে দু’বছর আগে দলের কেন্দ্রীয় প্লেনাম এবং গত বছর অক্টোবরে রাজ্য প্লেনাম— দুই আসরেই খোলামেলা আলোচনা হল। ঠিক হল, ধর্মীয় আচার পালনের মধ্যে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা যাবেন না ঠিকই। কিন্তু সামাজিক উৎসবে অংশ নিতে হবে। তার পর থেকেই তন্ময়বাবুরা উৎসাহ নিয়ে রথ বা পুজো উদ্বোধনে হাত পাকাচ্ছেন, ইদের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন ছবি দিয়ে। যা আগে এ রাজ্যে কংগ্রেস বা তৃণমূল নেতাদেরই দস্তুর ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডাক্তারেরা দানব নন, আর্জি সুজনের

বাংলায় দুর্গাপুজোর চেয়ে বড় সামাজিক উৎসব আর কী আছে? সিপিএমে এই মতের শরিকই এখন বিস্তর। যে কারণে বিধায়ক তন্ময়বাবুও বলছেন, ‘‘দল তার কর্মীদের বলেছে সামাজিক উৎসবে অংশ নিতে। মানুষের আনন্দে-বিষাদে পাশে থাকাই রাজনীতিকদের কাজ। তা হলে পুজো উদ্বোধন নিয়ে আর বলার কী আছে!’’ নিজের কেন্দ্রে গোটাপাঁচেক পুজোর উদ্বোধনে আছেন তন্ময়বাবু। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে তাঁর সতীর্থ এবং কলকাতা ময়দানের ক্রীড়া-কর্তা মানস মুখোপাধ্যায় সংখ্যায় তন্ময়বাবুর চেয়েও বেশি পুজো উদ্বোধন করছেন। কামারহাটির বিধায়ক না থাকলেও জনসংযোগের যুক্তিতেই উদ্বোধন করতেন। এলাকার ক্লাবগুলিকে নিয়ে সমন্বয় কমিটিতেও তিনি আছেন।

তন্ময়-মানসদের পথে আবার হাঁটতে রাজি নন সুজনবাবু। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘‘পুজোয় অবশ্যই আছি। পুজোপ্রাঙ্গনে যাচ্ছি। কিন্তু মাটির প্রতিমায় এমন কিছু আছে বলে মনে করি না, যেখানে আমায় গিয়ে উদ্বোধন করতে হবে! আগেও করিনি, এ বারও উদ্বোধন করছি না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধনের ধুম নিয়ে কটাক্ষও করেছেন সুজনবাবু! মার্ক্সীয় সাহিত্যের বিপণি থেকে শুরু করে মণ্ডপে নিখাদ আড্ডার জনসংযোগে তিনি অবশ্য আছেন।

সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও দক্ষিণ থেকে উত্তর শহরতলিতে ডাক পেয়েছিলেন পুজো উদ্বোধনের। তিনিও সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করেননি। যদিও তাঁর উপরে এখন দলের ছড়ি ঘুরছে না!

দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, কোনও জনপ্রতিনিধি তাঁর কেন্দ্রে পুজো উদ্বোধন-সহ কোনও অনুষ্ঠানে যাবেন কি না, তার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বিতর্কের কোনও উপাদান আছে মনে করলে কেউ অবশ্যই দলে আলোচনা করে নিতে পারেন। তন্ময় বা সুজনবাবুরা কেউ আলাদা করে দলে আলোচনা করতে যাননি। কিন্তু দু’রকম মনোভাবই বলে দিচ্ছে, বিতর্ক শেষ হয়েও হল না শেষ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement